ড মোহাম্মদ ওমর ফারুক
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার,
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
দেশে অনেক অভিবাসী ভাইয়েরা বিদেশ থেকে এসে ডেইরি খামার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যার ফলে প্রাথমিকভাবে অধিক দুধের আশায় গাভীর জাত না দেখে শুধু দুধ উৎপাদন দেখে গাভী ক্রয় করেন। আমাদের অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি আকারের খামারীরা দুধালো গাভীর সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করেন না। আমরা সবাই চাই অধিক দুগ্ধ উৎপাদনশীল গাভী। সেজন্য গাভীর জাত না দেখে শুধু উৎপাদন দেখে অধিক মূল্য দিয়ে গাভী ক্রয় করেন। যার ফলে ছোট খামারী ভাইয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন না।
ডেইরি খামারকে লাভজনক করতে হলে তাড়াহুড়া না করে ৪-৫ টি মাঝারি অর্থাৎ ১০-১৫ লিটার দুগ্ধজাত সম্পন্ন (যদি বাবা মার বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে ভাল) গাভী ক্রয় করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যম ভাল জাতের বকনা উৎপাদন করতে হবে। গর্ভবতী গাভীকে পুষ্টিকর সুষম খাবার দিলে, উৎপাদিত বকনাগুলিই হবে ফার্মের ভবিষ্যৎ।
আপনার ফার্মের ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু, উন্নত জাতের কাঁচা ঘাসের পর্যাপ্ততা, শ্রমিক মজুরি, দুধের মূল্য প্রভৃতি বিবেচনায় এনে কত লিটার উৎপাদনশীল গাভী সৃষ্টি করতে চান সেই লক্ষ্য নিয়ে গাভীকে গর্ভধারণ করাতে হবে। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেমন জাতের গাভী আপনার খামার উপযোগী । গাভীটির জেনেটিক বৈশিষ্ট্য এমন হবে যেখানে আপনার খামারের পরিবেশের সাথে গাভী খাপ খাওয়াতে পারে, পরিমিত খাবারে অধিক দুধ উৎপাদিত হয়, বাচ্চা প্রসবের ৩ হতে ৪ মাসের মধ্যে পুন:গর্ভধারণ করে,
রোগ ব্যাধি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষভাবে ম্যাসটাইটিস,বকনা বয়স ১৬-১৮ মাস হলেই শারীরিক বৃদ্ধি আশানূরুপ হয় এবং এই বয়সেই প্রথম ঋতুচক্র আরম্ভ হবে, প্রসবজনিত সমস্যা কম হবে এবং
ধারাবাহিকভাবে ২৪০-২৫০ দিন দুধ উৎপাদন হবে এবং তার জীবদ্দশায় দুধ উৎপাদন ঠিক রেখে ৫-৭ টি বাচ্চা প্রসব করবে।
উৎপাদিত বাচ্চার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করতে হবে। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাকে পর্যাপ্ত শাল দুধ খাওয়াতে হবে, দৈহিক ওজনের ১০% হারে দুধ খেতে দিতে হবে, ২-৩ সপ্তাহ পরে দুধের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে মিল্ক রিপ্লেসার দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ ডেইরি পুষ্টিবিদের সহায়তায় বকনা লালন-পালন করতে হবে যাতে নির্দিষ্ট এবং কাংখিত সময়ে শারীরিক গঠন ও ঋতুচক্র আরম্ভ হয়।
আমাদের দেশে এখনোও ভাল জাতের ও মানের বকনা উৎপাদনকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। যেমনটি ডিম উৎপাদনের জন্য পুলেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই ক্ষেত্রেও অধিক দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনশীল বকনা বা ষাঁড় উৎপাদনের জন্য ভ্রুণ স্থানান্তর ও ভ্রুণ লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশী বা সংকর জাতের গাভীতে স্থানান্তর করে ব্যাপকভাবে কাংখিত বাছুর উৎপাদন করে বাজারজাত করা যেতে পারে।
দেশে সরকারী ও বেসরকারী কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে দেশীয় ও সংকর জাতের গাভীকে সংকরায়ন করার ফলে অনেক বকনা গরু উৎপাদিত হচ্ছে। সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালা থাকলেও, পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, খামারিদের কোন ধরণের গাভীকে কি প্রকৃতির ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা প্রজনন করাবে অনেক খামারীর এবিষয়ে অজ্ঞতা, কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর খামখেয়ালিপনায় অনেক দেশীয় গাভী থেকে সংকর জাতের বকনা তৈরী হচ্ছে। কিন্তু এসমস্ত বকনা উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না বরং বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
অনেক নতুন খামারী হাট-বাজার থেকে 🐄#সংকর জাতের বকনা সংগ্রহ করে থাকেন। যাদের জাত সম্পর্কে তেমন তথ্য থাকে না। পাশাপাশি তাদের ফেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান না করায় বকনা প্রাথমিক ঋতুচক্রে আসতেও বিলম্বিত হয়। অনেকাংশে দেখা যায় বকনার বয়স ৩ বছর হয়েছে এখনও ডাকে আসেনি। তজ্জন্য খামারীরা এই অতিরিক্ত ১২- ১৪ মাসের খাদ্য খরচ, ব্যবস্থাপনা খরচ, চিকিৎসা খরচসহ মুনাফা ব্যতিরেকে লোকসান গুনতে হয়। সর্বোপরি গর্ভধারণ করানো গেলেও এই গাভী থেকে আশানুরূপ পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয় না।
কিছু কিছু খামারী ভাইয়েরা বকনা গরুর যত্ন নেন না, বরং তাদেরকে অবহেলায় বিক্রি করে দেন। অথচ বকনা গরুর সুষ্ঠু পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক দুগ্ধ উৎপাদনশীল গাভীতে পরিণত করা যেত। বরং এই খামারীগণ অনু্র্বর ৮-৯ লিটার দুগ্ধ উৎপাদনশীল গাভী রেখে খামারকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। কোন গাভী যখন ১৮-২০ লিটার দুধ দেয় ক্রমান্বয়ে তার উৎপাদন কমে ৮-১০ লিটারে চলে আসে কিন্তু খাদ্য গ্রহণ খুব কম-বেশি হয় না। ↙তাই সেই গাভীটি সঠিক সময়ে গর্ভধারণ না হলে খামারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
+ There are no comments
Add yours