বয়স সত্তর’র কোটা পার হলেও নিজের প্রতিবন্ধী ভাতা ও ভাইয়ের বয়স্ক ভাতা জোটেনি কপালে

Estimated read time 1 min read
Ad1

বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ::

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পুর্ব ধনিরাম গ্রামের মৃত শবজন আলীর কন্যা ছবিজন বেওয়া (৭৫)। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার।

স্বাধীনতার আগে বাবা-মা তাকে পাশের গ্রামের আব্দুল গফুরের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর স্বামী-সংসার নিয়েই ভালই ছিলেন ছবিজন।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! হঠাৎ একদিন কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ঝড় থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকা সিন্দুকের পাশে আশ্রয় নেন ছবিজন। কিন্তু সেই সিন্দুকটিই ছবিজনের মাথায় পড়ে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন তিনি।

আঘাতের কারনে ৬ মাসের মধ্যেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ছবিজন। তার বাবা ছবিজনের অনেক চিকিৎসা করালেও দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসেনি।

স্ত্রী অন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামী আব্দুল গফর তাকে তালাক দিয়ে নতুন করে ঘর-সংসার পাতেন। আর অন্ধ ছবিজনের ঠাঁই হয় গরীব অসহায় বাবার বাড়ীতে।

বিয়ের ৬ মাসের মাথায় স্বামী- সংসার হারানোয় পাথর হয়ে যান ছবিজন। কারও সাথে তেমন কথাবার্তা বলতেন না। চুপচাপ থাকতেন সব সময়। বাবা শবজন আলী পুররায় মেয়ের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও মেয়ের দৃষ্টিশক্তি না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি।

কয়েক বছর পর বাবাও চলে যান পরপারে। বাবার মৃত্যুর পর শোকে – দুঃখে বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি। এক পর্যায়ে দৃষ্টিহীন বাকশক্তিহীন ছবিজন বেওয়ার আশ্রয় হয় ছোট ভাই আসমত আলীর বাড়ীতে। ৩৫ বছর ধরে ভাইয়ের সাথেই আছেন তিনি।

গরীব দিনমজুর ভাইয়ের সংসারে অভাব অনটনে দীর্ঘ সময় কাটলেও দৃষ্টিহীন- বাকশক্তিহীন ছবিজন বেওয়ার ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধি ভাতা বা কোন সরকারী সহায়তা। এমনকি ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও ছোটভাই আসমত আলী জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাননি বয়স্কভাতা।

শনিবার (২ অক্টোবর) সকালে ছবিজনের খোঁজে হাসমত আলীর বাড়ীতে গেলে স্থানীয়রা জানান, চুয়াত্তর পেরিয়ে পচাত্তরে পা দিয়েছেন ছবিজন বেওয়া। চোখে দেখেন না, কথাও বলতে পারেন না তিনি। সব সময় মাটিতে বসে থাকেন। ছবি তুলতে চাইলে কয়েকজন মিলে লাঠিতে ভর করে দাঁড় করানো হয় তাকে।

ছবিজনের ভাতিজা ফজলু জানান, তার ৭৫ বছর বয়সের অন্ধ ফুফু কোন সরকারী সাহায্য পান না। কারন তার জাতীয় পরিচয় পত্র (এন আইডি কার্ড) নাই।

তবে ফজলুর দাবী ফুফুর না হয় আইডি কার্ড নাই, আমার বাবা আসমত আলীর তো আইর্ডি কার্ড আছে। তার বসয় ৭০ বছর। বাবার ভাতার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারের পিছনে, অনেক ঘুরেছি ভাতা পাইনি।

গরীব মানুষের কথা কেউ শোনে না।প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম জানান, আমরা গরীব মানুষ। থাকি চরে। কেউ খোঁজ খবর নেয় না। শুধু ছবিজন ও আসমত আলীই নয় চরে অনেক বয়স্ক -প্রতিবন্ধী কেউ তাদের ভাতা তো দূরের কথা কেউ খোঁজ খবর পর্যন্ত দেয় না।

এ প্রসঙ্গে বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী মিয়া জানান, ছবিজন বেওয়া ও আসমত আলীর ভাতার ব্যাপারে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। তারপরও তাদের খোঁজ খবর নিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours