নিজস্ব প্রতিবেদক :
বান্দরবানের লামায় যাত্রীবাহি বাস ও কার্গো ট্রাকে মুখোমুখি সংঘর্ষে লামা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাসের চালক মোঃ আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ আলমগীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্তায় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
১ জনের মৃত্যুতে দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা কমে ৩৪ জন। আহতরা লামা সরকারি হাসপাতাল, লামার আলিঙ্গন হাসপাতাল, চকরিয়া হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বুধবার (০৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় লামা-চকরিয়া সড়কের মিরিঞ্জা মাদানীনগর এলাকায় এই মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বাসটি যাত্রী নিয়ে লামা থেকে চকরিয়া যাচ্ছিল এবং কার্গো ট্রাকটি মিনারেল ওয়াটা সহ মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে লামা বাজারে আসছিল।
লামা ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় জনতা আহতদের উদ্ধার করে। বাসে ৪৯ জন যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনার পরপরই কার্গোর ড্রাইভার হেলপার পালিয়ে যায়। এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও কার্গো গাড়ি দুইটি রাস্তার উপরে উপড়ে পড়লে লামা চকরিয়া যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩ ঘন্টা পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাড়ি দুইটি সামান্য সরিয়ে গাড়ি যোগাযোগ সচল করা হয়। লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম আহতদের উদ্ধার ও যোগাযোগ সচল করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ আলমগীর বাস কার্গোর মুখোমুখি সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুনামাত্র আমি সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত লামা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ড্রাইভার মোঃ আনোয়ার হোসেন
লামা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার রায়হান জান্নাত বিলকিচ সুলতানা বলেন, বাস দুর্ঘটনায় হাসপাতালে মোট ১৯ জন আহত রোগী আসে। তারমধ্যে আশংকাজনক ও গুরুতর হওয়ায় আমরা ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করি, ৩ জনতে লামা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ও বাকী ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাসের ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন ও বমু বিলছড়ি মাইজপাড়া এলাকার মৃত মনির হোসেনের ছেলে মোঃ রফিক এই দুইজনের প্রাণের আশংকা আছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির যাত্রী মোঃ জিহান বলেন, আহত ১৬ জন যাত্রীকে অন্য বাস-জীপে করে চিকিৎসার জন্য চকরিয়া প্রেরণ করা হয়েছে।
লামা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া আহতরা হলেন, জোৎস্না দে (২০), শুভশ্রী (১০), রূপম চাকমা (২), জহর লাল (৫৫), নুর মোহাম্মদ (২৮), মোঃ সোহেল (৩২), রাজশ্রী দে (২), আনোয়ার হোসেন (৫০), নুরুল আলম (৩০), হাসনা বালা (৬০), মনু আলম (৩৫), তপন (৩৮), সরওয়ার (২৫), মোঃ রফিক (৩০), সরওয়ার আলম (৫৫), মোঃ সাহেদ (৬৫), শিব সংকর (৩৭), জেসি মার্মা (২২), আবুল হোসেন (৫৫)। লামা আলীঙ্গন হাসপাতালে ভর্তি নুর মোহাম্মদ (২০), মোঃ হাসান (২৫) ও জাহানারা বেগম (৪৯)। চকরিয়া নিয়ে যাওয়া আরো আহতরা হলেন, বাসের হেলপার মোঃ বেলাল (২৪), মেরি আক্তার (৪৫), মোহছেনা বেগম (৪০), আকিব (১০), ইমু (৬), জিহান (১৮), জাহানারা বেগম (৪৮), পাখি বালা (৭০) সহ ১৩ জন।
বাসের যাত্রী মোঃ জিহান বলেন, আমাদের বাসটি ধীরে সুস্থে পাহাড় উঠছিল। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী কার্গো ট্রাকটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আমাদের বাসকে চাপা দেয়। বাসের চালক গাড়িটি রক্ষা করতে রাস্তার বাম পাশের ড্রেনে ও গাছের কাছে চলে গেলে সেখানে এসে কার্গোটি ধাক্কা দিয়ে বাসটিকে ধুমড়ে মুছড়ে ফেলে। গাড়ির একজন যাত্রীও ভালো নেই। সবাই কমবেশি আহত হয়েছে। আমার মাথা ও হাত কেটে গেছে। আমার মা ছোট ভাই আহত। তাদের লামা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাসটি লামা থেকে চকরিয়া যাচ্ছিল।
লামা চকরিয়া রোডের বাস চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, লামা পাহাড়ি এলাকা ও রাস্তা উঁচু-নিচু। যার কারণে বাহিরের ড্রাইভাররা পাহাড়ি এলাকায় গাড়ি চালাতে দক্ষ না। বাহিরের গাড়ি লামায় ডুকলে চকরিয়া থেকে স্থানীয় ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ইদানিং এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। যার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে।
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় লামা ফায়ার সার্ভিস। লামা ফায়ার সার্ভিসের সাব অফিসার মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, এত হতাহত হয়েছে যে আমরা কাকে রেখে কাকে নিব বুঝতে পারছিলাম না। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে আমাদের গাড়িতে করে লামা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা বাস ও কার্গো গাড়িটি অপসারণ করে লামা চকরিয়া সড়কের যোগাযোগ সচল করে দিয়।
+ There are no comments
Add yours