বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী ( উপজেলা) প্রতিনিধি ::
প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায়। মামলার আসামি করা হয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাসব শল্লীধরা গ্রামের পাঁচ অসহায় দিনমজুরকে। পাঁচ দিন মজুরের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে করোনা প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ মামলায় কারাগারে যাওয়া কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার পাঁচ দিনমজুরকে বুধবার (৬ অক্টোবর) জামিন দিয়েছে উচ্চ আদালত। জামিন পাওয়া পাঁচজন ব্যক্তিরা হলেন প্রভাস চন্দ্র রায়, কমল চন্দ্র রায়,ফুলমনি রানী রায়, রণজিৎ কুমার ও নিখিল চন্দ্র রায়। কমল চন্দ্র রায় মামলাটিতে পলাতক ছিলেন।
বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন দেয়। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
আসামীপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, করোনা প্রণোদনার নামে ‘প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে চার দিনমজুর কারাগারে’ শিরোনামে একাধিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সে সব প্রতিবেদন যুক্ত করে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনের শুনানি নিয়ে জামিন দিয়েছেন।
জামিনের খবর মুহুতের মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঐ পাঁচ দিনমজুরের বাড়ীতে পৌছালে আনন্দের সাগড়ে ভাসছে। বুধবার বিকালে পাঁচ দিন মজুরের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গোটা এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। স্থানীয়রাসহ তাদের নিকট অত্মীয় স্বজন ছুঁটে আসেন তাদের বাড়ীতে।
স্থানীয় যুবক তাপস চন্দ্র রায়সহ অনেকেই জানান,করোনা প্রণোদনা দেয়ার কথা বলে এই পাঁচ অসহায় দিনমজুরদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তারা কোন ভাবেই জড়িত নন। দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।
প্রভাসের স্ত্রী অঞ্জলী রানী জানান, তার স্বামী জামিন পাওয়ায় তিনি খুশী হয়েছেন। তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মা মালতী রানী জানান পুজার আগেই ছেলেরা জামিন পাবে ভাবতে পারিনি। জামিনের খবর পাওয়ায় আমরা খুশী। ছেলের জন্য অনেক কষ্টে ছিলাম। কোন রাতেই ঘমাতে পারিনি বাবা। আমার ছেলেকে যারা জামিন দিয়েছেন তাদেরকে ঈশ্বও যেন মঙ্গল করে।
উল্লেখ্য যে, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানা পুলিশের সহযোগিতায় গাজীপুর পুলিশ গত ২ জুলাই চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় ১ জুলাই শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক।
মামলায় পাঁচ দিনমজুরসহ আসামি করা হয় শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসারক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী তানভীর ইসলাম স্বপন করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেয়ার কথা বলেন পাঁচ দিনমজুরকে। গত ১৬ জুন ৫ জনকে নিয়ে যান সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায়। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন। এসব দিনমজুরদের শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে সই ও টিপসই নেন।
তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই। ব্যাংক একাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে এমন প্রশ্রুতি দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে একদিন গিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এরপর পাঁচ দিনমজুরের চালা করা অ্যাকাউন্টে কিছুদিন পর ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে যায়। যার কিছুই জানতেন না তারা। কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩-৪ জন লোক সেসব টাকা তুলে নেন। সন্দেহ হলে শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেয় ব্যাংকের ম্যানেজার।
+ There are no comments
Add yours