ইউনুস আলী, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি >>
১৯৭১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দাগারকুটি গ্রামে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী নৃশংস ও নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়ে প্রায় ৬৯৭ জন নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করে ।
উলিপুর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ব্রহ্মপূত্র নদ অববাহিকায় হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি গ্রামের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর এ বর্বরোচিত নারকীয় তান্ডব চালায়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও উলিপুরের মানুষের কাছে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।
সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ রমজান শনিবার। যখন ফজরের আজানের ধ্বনী মসজিদ হতে আসছিল। কোথাও কোথাও নামাজের প্রস্ততি চলছিল। ঠিক ঐ সময় ঘাতকদের মুহুর্মুহু মর্টারের শব্দে যেন সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে যায়।
পরক্ষণেই ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার মানুষের এলোপাতাড়ি দৌড়ঝাপ এবং আর্তচিৎকারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতাড়না হয়।অনেকে ব্রহ্মপূত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে।
এসব অসহায় গ্রামবাসীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা মহুর্তেই শেষ হয়ে যায়।পাক-হানাদার বাহিনী,তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তারা আত্মগোপনে থাকা গ্রামের অসহায় মানুষগুলোকে ধরে এনে দাগারকুটিতে জরো করে হাত-পা বেঁধে নির্দয় ভাবে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন আবাল বৃদ্ধ বনিতা এমনকি মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিও রক্ষা পায়নি।
ঐদিন পাক-হানাদার বাহিনীর দিনভর হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ চালায় গ্রামগুলোতে।আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়,হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর,দাগারকুটি, হাতিয়া বকসি, রামখানা ও নয়াদাড়া গ্রামের শত শত ঘর-বাড়ী।মুহুর্তেই গ্রামগুলো পরিণত হয় ধ্বংস স্তুপে।
সেই ভয়াল দিনটির কথা মানুষের মনে হলে আজও তারা শিউরে ওঠে। তাই ১৩ই নভেম্বর উলিপুর বাসী এই দিনটিকে হাতিয়া গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতি বছর পালন করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজও এই শহীদ পরিবারগুলোর ভাগ্যে সরকারিভাবে শহীদের স্বীকৃতি পায় নাই।সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
+ There are no comments
Add yours