কুড়িগ্রামের কবজী বিহীন দুই হাতে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মোবারক

Estimated read time 1 min read
Ad1

ইউনুস আলী,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি >>

জন্ম থেকেই দুই হাতে কবজী না থাকলেও লেখাপড়া থেমে থাকেনি মেধাবী ছাত্র মোবারক আলীর। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে। তার পিতা দিনমজুর এনামুল হক।

সোমবার (২২ নভেম্বর)  ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসাবে গণিত বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তার রোল নম্বর ২১৫৭৭৩।

সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া কথা থাকলেও বাড়তি সময় লাগেনা মোবারক আলীর। অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হল ত্যাগ করেন।

মোবারক আলীর পরিবার সুত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুই হাতের কজ্বি ছিল না মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তার অভিভাবকরা। কি হবে তাকে দিয়ে। মোবারক আলীর বেড়ে উঠায মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না।

ছেলের এমন অবস্থায় বিচলিত হলেও ভেঙ্গে পড়েননি তিনি। মায়ের সাহসে ছেলেকে স্কুল মুখি করে দুই হাতের কজ্বি একখানে করে কলম দিয়ে খাতায় লেখার কৌশল শিখানো হত তাকে।

স্কুলে ভর্তি পর সহযোগীতা করেন অন্যান্য ছাত্ররাও। এ ভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সে । ২০১৮ জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ-৫।

চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ওই কব্জী বিহীন দু’হাত একত্রে করে খাতায় উত্তর পত্র লেখে দিচ্ছেন অদম্য মেধাবী মোবারক আলী। দুটি হাতের আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতই পরীক্ষা দিচ্ছেন সে।

জন্মের পর থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে উঠে। তার দুটো হাত অচল হলেও কখনও দমেনি এ লড়াকু সৈনিকের লেখা পড়া । শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন এবারো।

মোবারক আলী মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড় । সে নিজের কাজ গুলো প্রায় সব নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তার পড়েও তাকে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।

মোবারক আলী জানান, হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া  করবেন। আমি যেন ভাল রেজাল্ট করে বাবা-মা সহ শিক্ষকদের মুখ উজ্বল করতে পারি ।

কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক প্রতিবন্ধি হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি সে ভাল ফলাফল করবে।

ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, মোবারক আলী অন্য শিক্ষার্থীদের মতই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা শেষ করছে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours