কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম ::
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। অগণিত মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। এবছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে।
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপন করা হবে সারাদেশে। ইতিমধ্যে জাতীয় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছে দেশ। স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে সে তুলনা করলে আরো বহুদূর পথ পেরোতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে সময়ে সময়ে নানা সংকটে পতিত হয়েছিল আমাদের এই মাতৃভূমি। কিন্তু সব সংকট মোকাবেলা করে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে এখনো তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে টিকে আছে। তবে উন্নতি যতটুকু হবার কথা ছিল তা কিন্তু হয়নি।
এর জন্য দায়ী আমাদের মাঝে বিদ্যমান পারস্পরিক অবিশ্বাস ও প্রতিহিংসা। পৃথিবীর অনেক দেশ যেমন মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে তেমন উন্নত ছিল না। ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থানে ছিল।
কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঐ সব দেশ আজ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পেরেছে। এসব সম্ভব হয়েছে সেসব দেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার কারণে। রাজনৈতিক বিভক্তি থাকলেও ঐ দেশগুলো উন্নয়নের প্রশ্নে আপোষ করেনি কখনোই। পায়ে ঠেলেছে বিভক্তি আর মতপার্থক্যকে। আমরাও আমাদের দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলতে পারি। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক মতপার্থক্য কমিয়ে আনা।
সমঝোতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দেওয়া। আর আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এ ব্যপাারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যে যাই বলুক আমাদের একথা স্বীকার করতেই হবে যে, প্রতিহিংসার বৃত্ত থেকে আমরা বের হতে পারিনি। পারিনি দোষারোপের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে।
বেড়েছে সন্ত্রাস, খুন, গুম, ছিনতাই, রাহাজানি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মসহ নানা কুকীর্তি। অপরাধীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। এসব প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা রোধ ও দ্রুত রায় কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে।
উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু, ঢাকার মেট্রোরেলের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সড়ক-মহাসড়কে চলছে সংষ্কার ও উন্নয়ন। উন্নয়নের সেই সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দারিদ্র বিমোচনের জন্য নিতে হবে মহা পরিকল্পনা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খবর নিলে বহু দরিদ্র মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে।
হয়তো যাদের পাশে কেউ নেই। দুঃখ, কষ্টে জীবন চলছে। মানুষের দরিদ্রাবস্থা দূর করতে না পারলে উন্নয়নে সমাধান আসবেনা। আগে দরিদ্র মানুষের জীবন মানের উন্নতি ঘটাতে হবে। বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব স্তরে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূর করতে হবে। সব ধরনের নিয়োগ, ভর্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। নৈতিক চরিত্র গঠন উপযোগী ও আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেন দুর্নীতি জেঁকে বসে থাকতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর্থিক অস্বচ্ছতা ও অপচয় দেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের কোন বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কাজ করতে হবে সবাইকে। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে নিজেদের সুরক্ষা ও বেঁচে থাকতে হলে আরো আরো কী কী করতে হবে। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে আধুনিক ও বিশ্বমানে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পোষাক শিল্প ও আইসিটি খাতের অগ্রগতি হচ্ছে। ইন্টারনেটের ফাইভ জি চালু হচ্ছে। এরপরও আমরা উন্নয়নের কাংখিত মানে যেতে পারছি না। সেটা আমাদের নিজেদের কারণে। উন্নয়নের জন্য আমরা এক হতে পারি না। একে অন্যেরটা সহ্য করতে পারি না।
দলাদলি আর রাজনৈতিক সংকট আমাদের দেশটাকে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে। এভাবে হলে সমৃদ্ধির পথে এগোবে না দেশ।
দেশটা সুন্দর হোক, সমৃদ্ধশালী হোক এটাই আমাদের চাওয়া। সব ভেদাভেদ ভুলে গড়তে হবে সমৃদ্ধ একটি দেশ বাংলাদেশ। আসুন, সকলে মিলে এবারের বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে সেই সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ নিই।
★লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
[email protected]
+ There are no comments
Add yours