বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি মৌসুমে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রান্তিক চাষিরা। চাষিরা তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে ভোর থেকেই মাঠে মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অধিক লাভের আশায় আলু চাষে ঝুঁকছেন । উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষিরা আলুর দাম বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য সরকারে সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ এ বছর আলু চাষে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ যাবৎ পর্যন্ত উপজেলা স্থানীয় জাত ৮০ হেক্টর ও উফশী জাত ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষিরা আলুর চাষাবাদ করেছে। যেভাবে প্রান্তিক চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকছেন তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। কৃষি অফিস ও প্রান্তিক কৃষকরা জানিয়েছেন প্রতি বিঘা জমিতে এস্টারিজ, রোসাগোল বীজ দিয়ে ভাল ফলন হলে ১০০ থেকে ১১০ মন পর্যন্ত বিঘা আলু উৎপাদন হয়। বিঘা আলু চাষবাদ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা । এ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষক ধার-দেনা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলুর চাষ করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোন জমি পতিত নেই বিস্তৃর্ণ জমিতে কৃষকরা ক্ষেতে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কোন কৃষক ঘরে বসে নেই। প্রতিদিন সকাল হলেই প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষেতে আলু চাষ করছেন এবং আলু ক্ষেতে পরিচর্যার ব্যস্ত সময় পাড় করেন। আলু চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। তাই গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ব্যাপক হারে চাষিরা আলুর চাষ করছেন। যে সব চাষির নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করে স্বচ্ছল ভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। অধিক লাভের আশায় এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রতি বছরেই আগাম আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। অঞ্চলের কৃষকরা আলু চাষের পাশপাশি সারা মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের সবজির আগাম চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক তৈয়ব আলী (৫৫) জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর ১১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর বাম্পার ফলন ও দাম ভাল থাকলে চাষিরা লাভবান হবেন। এছাড়াও তিনি জানান, সরকার যদি আলু বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ তৈরী করে তাহলে আলু চাষিদের কখনও লোকসান গুনতে হবে না।
একই ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামেরর কৃষক ঈসা মিয়া ও হাসেম আলী জানান, আমাদের কোন নিজস্ব জমি নেই। আমরা প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমি লিজ (কন্ট্রাক) নিয়ে আলুর চাষাবাদ করছি। এ বছরও ১৫ বিঘা জমিতে আলুর চাষাবাদের জন্য অন্যের জমি লিজ নিয়েছি। ১০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে বাকি ৫ বিঘাতেও আলুর চাষ সম্পূন্ন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা ব্যাপক হারে আলু চাষাবাদ করছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবছর আগাম জাতের আলুসহ ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ যাবৎ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের সর্বাত্বক সহযোগীতায় ৭৮০হেক্টর জমিতে প্রান্তিক চাষিরা আগাম জাতের আলুর চাষাবাদ করেছে। আশাকরি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলুর দাম পেলে হাজারও কৃষক লাভবান হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
+ There are no comments
Add yours