এম হেলাল উদ্দিন নিরব ::
চট্টগ্রামে দিন দিন বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। যে বয়সে শিশুদের বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে এখানকার শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন পেশায়।
চট্টগ্রামের পটিয়া,চন্দনাইশ,বোয়ালখালী,লোহাগড়া, কেরানীহাট, বাঁশখালী,আনোয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকায় শিশু শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে।
তার মধ্যে মোরটসাইকেল ওয়ার্কশপে, গাড়ির গ্যারাজে, স্টিল ও কাঠের ফার্নিচারের দোকান, ভাঙ্গারীর দোকান, হোটেল, ওয়ার্লিং এর দোকানে, কসমেটিক্স দোকান, ঔষুধের ফার্মেসী ও ব্যাটারীর দোকানসহ বহুতল ইমারত নির্মাণে কাজে তারা নিয়োজিত।
বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশ শিশুশ্রম বন্ধের ঘোষণা দিলেও, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় এটি বেড়েই চলেছে। ফলে দিনদিন এই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন সচেতন মহল বলছে, শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ হলো দারিদ্রতা।
আর আমাদের দেশের ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এসব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। আর বেশির ভাগ পরিবার অসচ্ছল। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য ছোট থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ শুরু করে।
তাই তাদের নিজেদের আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ শুরু করতে পিছপা হচ্ছে না। এদের মধ্যে প্রত্যেকেরই বয়স ৯ থেকে ১১ আবার কারো ১৩ কিংবা ১৪/১৫ হবে।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, বাস-ট্রাকের হেলপারি, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহশিশু শ্রমিক, ইটভাঙা, ইটভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক স্টিলের আলমারির দোকানে শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ। ফলে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।
শিশু শ্রমিক হাসান জানান, আমার বয়স চৌদ্দ। আমি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা পড়া করেছি। আমরা ২ ভাই ১ বোন। করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধ হলে এবং বাবার আয় কমে গেলে বাধ্য হয়ে আমি রিক্সা চালানো শুরু করি।
এ কাজ তো ঝুঁকিপূর্ণ, এ কাজ কেন করে জানতে চাইলে সে জানায় অন্য কাজের চেয়ে এ কাজে টাকা বেশি পাই। আবার বাড়া কম হলে তখন আয় কম হয়।
মো: আরিফ (১২) নামে আরেক শিশুশ্রমিক জানান, আমার বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। বাবা রফিক মিয়া রিকশা চালান।
সংসারের অভাব মেটানোর জন্য বাবা আমাকে মেকানিজ কাজ শেখানোর জন্য গ্যারাজে দিয়ে গেছেন। কাজ করতে কষ্ট হলেও টাকার রোজগারের জন্য এই কাজটাই করতে হবে আমাকে।
আরেক শিশুশ্রমিক কায়সার জানান, করোনার সময় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারের তাগিদে হোটেলে কাজ করি। কাজ করে যা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়।
করোনার আগে আমিও স্কুলে পড়তাম, কিন্তু এখন স্কুলে যেতে পারি না। হোটেলে কাজ করি সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। অনেক সময় কাজ করতে একটু দেরি হলে মালিক গালিগালাজ ও মারধর করে।
এক হোটেল মালিক মো. রশিদ আহমেদ বলেন, অভাবের কারণে অভিভাবকরা শিশুদের কাজে পাঠাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে বেতনের পাশাপাশি ওরা কাস্টমারের কাছ থেকে বকশিশও পায় তা দিয়ে নিজে চলে ও পরিবারে দেয়।
এসময় শিশু হেলপার আরিফ (১০) এর সঙ্গে কথা হলে সে জানান, তার বাবা মারা গেছে অনেক আগে ছোট বোন এবং বৃদ্ধ দাদি আছে। মা মানুষের বাসায় কাজ করে কিছু টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চালাতে মার খুব কষ্ট হয়।
তাই মাকে সাহায্য করার জন্য গাড়ির হেলপারি করি। পড়াশোনার বিষয় জানতে চাইলে আরিফ বলে, আমি টু পর্যন্ত পড়ছি। অভাবের সংসারে পড়ালেখা হয় না ঘর ভাড়া দিমু না পরমু, আর খামু কি?
আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। যেসব শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তাদের সচেতনতার জন্য সরকারের পাশাপাশি সচেতন মহল কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশ্লেষকরা বলেন, সরকারি যে নীতিমালা বা পলিসি রয়েছে সে অনুযাযী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবিষয় নজরে আনার।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হওয়ায় এখানকার শিল্প কলকারখানা, হাট-বাজার, যানবাহন, ওয়েলিং দোকানসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি শিশুশ্রমিক প্রশ্রয় দেয়।তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
+ There are no comments
Add yours