ইউনুস আলী,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় অপরিকল্পিত ভাবে একটি কালভার্ট বক্স তৈরি করে সরকারের ৩৫লাখ টাকার অপচয় করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার কচাকাটা থানা টু মুড়িয়ারহাট গামী রাস্তার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লুছনি গ্রামে অবস্থিত এই কালভার্টটি।স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারের টাকা অপচয় করে যে কালভার্ট করা হয়েছে তা জনগণের কোন উপকারিতায় আসবে না ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়,প্রায় ৩৫লাখ টাকা বরাদ্দে ৯মিটার (২৭ফুট) ৪ অনুপাত ৪ ধরণের বক্স কালভার্টটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। গত বছর জুন মাসে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ শুরু আগেই ওই কালভার্টের উত্তর দিকের জমিতে মাটি ভরাট করে ৩টি বসত বাড়ি তোলেন ফজর আলী, নাসির উদ্দিন ও লাল চান মিয়া। ফলে কাজ শুরুর আগেই কালভার্ট দিয়ে পানি নিস্কাশনের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে পানি বের হওয়ার জন্য পাশের জমি দিয়ে সরু একটি নালা কালভার্টের মুখে সংযোগ দেয়া হয়। সেই জমির মালিক আব্দুল খালেক বাড়ি তোলার জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করেছেন। এতে করে নালার মুখ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে সেই কালভার্ট দিয়ে এক প্রান্ত বন্ধ থাকায় এক
ফোটা পানি গড়ানোর কোন উপায় নেই।দেখে মনে হবে বাড়ির উঠানে দেয়া হয়েছে কালভার্ট। নিমার্ণ সময়ে এলাকাবাসী এবং বাড়ির মালিক কালভার্টটি সরিয়ে অনত্র নির্মাণ করতে অনুরোধ করলেও বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
বাড়ির মালিকদের ফজর আলী বলেন,২০১৭ সালে বন্যায় তাদের বাড়ি দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যায়। ওই বছর এই জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নেন তিনি। পরের বছর আমরা বাড়ি নির্মাণ করি। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন কালভার্টের কাজ শুরু হয়। আমরা কালভার্টটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বললেও কাজ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, কালভার্ট নিমার্ণের আগেই বাড়ি উঠেছে। আমরা কালভার্টটি পূর্ব দিকে সরিয়ে নির্মাণ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা বলেছে যেখানকার নকশা হয়েছে সেখানেই নির্মাণ করতে হবে।
অপরিকল্পিত এবং দায়সারাভাবে কালভার্ট করায় সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য আলমাস উদ্দিন বলেন, এই কালভার্ট মানুষের কোন কাজে লাগবে না। বাড়ির উঠানে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের টাকা নষ্ট হয়েছে। কালভার্ট নির্মাণ শেষ হলেও সেখানে রং এবং ফলক লাগানো হয়নি।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন,২০১৭ সালে বক্স কালভার্টটি নির্মাণের নকশা প্রস্তুত করা হয়। ২০১৮সালে সেটির টেন্ডার হয়। নকশা করার সময় ওই জায়গায় কোন বাড়ি ছিল না।
কালভার্টটি নির্মাণকালে তদারকির দ্বায়িত্বে ছিলেন উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন,২০২০সালে তিনি নাগেশ্বরীতে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদানের আগেই কালভার্টটির ভিতের কাজ শেষ হয়েছে। তখন আর কিছু করার ছিল না। ফলে সেখানেই কাজ শেষ করতে হয়েছে। তিনি আরোও বলেন,ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত জুনে চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী ওয়াসিম আতাহার জানান, খাল ভরাট করে কালভার্টটির পানি বের হওয়া পথ বন্ধ করার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
+ There are no comments
Add yours