আমির হোসেন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির রাজাপুরের পোনা নদীর চরাঞ্চলে আমন ধান, সরিষা ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের পর এবার গমের ব্যাপক ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। এবছর আশাতীত ফলন হওয়ায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষক আল-আমিন। চলতি মৌসুমে পোনা নদীর চরে ব্যাপক পরিসরে হয়েছে গমের চাষ। এ বছর ভালো ফলন ও বাজার দামে খুশি কৃষকরা। ২/১ সপ্তাহের মধ্যে গম কাটা ও মাড়াই পুরোদমে শুরু হবে।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে ৩৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। ৩৫ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে গমের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছসহ গমের শিষ পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। সোনালি আভায় ঢেকে আছে মাঠ। যেন চারদিকে গমের সেই সোনালি রঙে নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। হলুদ সোনালি রঙে সাজিয়ে তুলেছে প্রকৃতির রূপকে। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে গম কাটার কাজ। গম কাটা, শিষ থেকে গম ছাড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রতিটি কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।গম চাষ করে কৃষকদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। চরের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু ফসল আর ফসল। বিভিন্ন ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে চরাঞ্চলের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। চৈত্র মাসের মধ্যের দিকে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। গমের বীজ বপনের পর খুব বেশি সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মতো জৈব সার ও চারা বড় হওয়ার কিছুদিন পরেই মাটির উপরে অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে গম চাষে খরচ হয় কম লাভবান হবে কৃষক-কৃষাণীরা।
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং মূলধন পেলে গম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে কৃষকদের দাবি। চলতি বছর পোনা নদীপাড়ের গমের আবাদ করেছেন। কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই চরের জমিতে নিরলসভাবে শ্রম ব্যয় করেন। কৃষকের ঘামে আর শ্রমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষক সূত্রে জানা গেছে, ইরি বোরো ধানের তুলনায় গম চাষে খরচ কম লাভ বেশি। এবছরে গম চাষে ঝুঁকে পড়ে কৃষকেরা। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ থেকে যথাসময়ে বারি ৩৩ জাতের ২০ কেজি বীজ, ডিএপি সার ১০ কেজি, পটাশ সার ১০ কেজি দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগসহ পরিচর্যার কারণে চাষাবাদে ফলন অনেক ভালো হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই অনেক স্থানে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবে।
কৃষক আল-আমিন বলেন, গত ১০০ বছর ধরে ঐ স্থানে চর জেগে ওঠায় সেখানে এবার প্রথম ২০শতাংশ জমিতে গমের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় আগামী বছরে ৩বিঘা জমিতে গম চাষ করতে চান বলে জানান। বর্ষা মৌসুমে চরের জমি পানিতে ডুবে থাকে। তখন আমন ধান চাষ করতে হয়। ধান টাকার পরে চর থেকে পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে এখানকার কৃষকরা গমের আবাদ অনন্যা ফসল চাষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়া গেলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
কৃষক জুয়েল বলেন, পোনা নদীর চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। চরাঞ্চলের জমিতে ধান, টমেটো, গম, ডাল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন ও তিলসহ বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়ে রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে অনেক কৃষক-কৃষাণীর ঘরে শান্তি এসেছে।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, রাজাপুর উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। রাজাপুরে এবছর ৩৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।
গমের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি। উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল গম বীজ দিয়ে তারা ফসল ফলিয়েছে। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামী বছর গমের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্ষা মৌসুমে চরগুলো পানিতে ডুবে থাকে। পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ডুবে যাওয়া চরের জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমাণ কম লাগে। এজন্য পোনা নদীর চরে গম চাষে বেশি খরচ হয় না। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফলে গম চাষের দিকে ঝুকছেন অনেক কৃষক।
+ There are no comments
Add yours