ছাত্রলীগের সাংগঠনিক রাজনীতির প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়

Estimated read time 1 min read
Ad1

ইয়াসির আরাফাত-তূর্য

সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়::

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দু’টি ঐতিহাসিক উক্তি করেছিলেন:

  • ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই; আর, ছাত্রলীগ হলো সোনার মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান।’
  • ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।’

এ জাতির বৃহত্তর কল্যাণে ছাত্রলীগের আত্মত্যাগের কালজয়ী সংস্কৃতির পরম্পরা হিসেবে সাম্প্রতিককালে বৈশ্বিক মহামারি করোনা দুর্যোগ

ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ধান কেটে দেওয়া অভিযান, জয় বাংলা অক্সিজেন সার্ভিস,

বিনামূল্যে বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম, ত্রাণ কর্মসূচি, করোনা আক্রান্তদের বাঁচাতে প্লাজমা ব্যাংক গঠন, রক্তদান কর্মসূচি,

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ, বিনামূল্যে গ্রাম গঞ্জে ও বিভাগীয় শহরগুলোতে মধ্যবিত্তদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উপহার কার্যক্রমসহ জনসচেতনতামূলক পথসভা,

করোনা আক্রান্ত মৃত লাশের জানাজা-দাফন ও সৎকার,

এমনকি করোনায় মৃত্যুবরণকারী ভিন্নমতাদর্শের বিএনপি নেতাদের লাশও জীবন বাজী রেখে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীগণ।

কিন্তু, পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই বিশাল ইতিবাচক জনমুখী কর্মযজ্ঞ দেশের জনমানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না,

কিন্তু ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে তা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়।

এ থেকে অনুমেয় যে দেশবাসী ছাত্রলীগকে সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকায় দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

জনগণ ছাত্রলীগের কোনোরূপ নেতিবাচক ভূমিকা দেখতে চায় না বলেই ছাত্রলীগকে জড়িয়ে যেকোনো অন্যায় বা নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে তারা সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন।

তবে ছাত্রলীগকে সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার পেছনে ছাত্রলীগের ভেতরে বাইরের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত লোকজনের বিতর্কিত ভূমিকা দায়ী।

এর কারণগুলো নিচে উল্লেখ করার প্রয়াস চালানো হলো-

১) যারা নেতা হয়ে যান তারা সংগঠনের রাজনীতি না গুছিয়ে ব্যক্তিগত ঠুনকো রাজনীতির ফায়দা লুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

২) কর্মীদেরকে সাংগঠনিক ও দলীয় প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ না করে নিজস্ব চাটুকারিতায় উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগের আদর্শ ও রাজনৈতিক লক্ষ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।

৩) বঙ্গবন্ধু, দল কিংবা নেত্রীর প্রচারণা অপেক্ষা ছাত্রনেতাদের ব্যক্তিগত প্রচারণাকে মূল্যায়নের অগ্রাধিকার প্রদানের সংস্কৃতি।

৪) কর্মীদের সুস্থ্যধারায় সুকৌশলী রাজনৈতিক, আদর্শিক কর্মসূচি ও করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা না দিয়ে ব্যক্তিগত গ্রুপিংয়ের অপসংস্কৃতিকে তোষণ করা।

৫) নেতৃবৃন্দ কর্তৃক জ্বি হুজুর ও মোসাহেবিকে প্রাধান্য দেওয়া।

৬) দলীয় চেইন অব কমান্ড ও বিভিন্ন ইউনিট সমূহের কমিটি প্রণয়নের রূপরেখা নির্ধারণ না করে দেওয়া।

৭) দল থেকে প্রাপ্ত জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি নিয়ে দলের রাজনীতি না করে ব্যক্তি রাজনীতিকে উৎসাহ দেওয়া।

৮) কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বিত রাজনৈতিক আদর্শিক আলোচনায়

সিম্পোজিয়ায় অংশ না নেওয়ায় দলের অভ্যন্তরে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে।

সাম্প্রতিককালে ভাস্কর্য ইস্যু ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিএনপি জামায়াতের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের

আস্ফালনের সময় দেশের বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ও কর্মীদের বিতর্কিত অবস্থান থেকে তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।

৯) নেতৃবৃন্দের অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণের হীন মানসিকতা ও বিভিন্নভাবে সাংগঠনিক রাজনীতি পরিচালনায় আপোষকামিতার সংস্কৃতি।

১০) সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না নিয়ে শুধু শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দুয়ারে ধরণাদাতা অতিউৎসাহী অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের মাঝেই নেতৃত্ব সীমাবদ্ধ রাখা।

১১) কেন্দ্রসহ সকল ইউনিটের পদপ্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত, তাদের সাংগঠনিক যোগ্যতা ও

স্ব স্ব ইউনিট ভিত্তিক অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের তথ্য না নিয়ে শুধুমাত্র মুখচেনা, ব্যক্তিগত সান্নিধ্য ও ঊর্ধ্বতন লবির ভিত্তিতে পদ প্রদান।

১৩) শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাংস্কৃতিক চর্চা ও দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান না করা প্রভৃতি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ বলে মনে করি।

পরিশেষে;

যেকোনো ইউনিটের নেতৃত্ব গ্রহণ করে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ওপরে উল্লেখিত কারণগুলো পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনা করে আদর্শিক ছাত্ররাজনীতি,

সাংগঠনিক রাজনীতির কেন্দ্রীয় ও ইউনিট ভিত্তিক রূপরেখা প্রদান করলে, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা বা প্রশ্নবিদ্ধ করার শক্তি বা সামর্থ্য কারোরই নেই।

কাজেই, আসুন আমরা নিজস্ব ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের আদর্শিক পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যৌবনের সংগ্রাম দ্রোহ বিপ্লবের উত্তাপে গড়া প্রাণের সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল ও আদর্শিক কর্মসূচির সেই চিরায়ত বিপ্লবের পথে পরিচালিত হই।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শপথ হোক, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে প্রাণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির আলোকমশাল হাতে এগিয়ে যাবো আলোকিত আগামীর পথে।’

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
জয় দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours