সোমবার (২৫ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
সংলাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে দলটির নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল, পাঁচ নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাrর উপস্থিতিতে লিখিত প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফজলে হোসেন বাদশা।
প্রস্তাবগুলো হলোঃ
১। ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে সংসদ নির্বাচন সংবিধানের বিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে এর কোনো বিকল্প নেই।
ক) সরকার যাতে নির্বাচনের সময় ক্ষমতার প্রভাব খাটাতে না পারে তার জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকার দৈনন্দিন কার্যাবলী ছাড়া নীতিগত বা উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করতে পারবে না। উন্নয়নসহ কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সরকারি কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তা ছাড়া সব প্রোটকল সুবিধা স্থগিত থাকবে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয় নিশ্চিত করবেন। (এ বিষয়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচনকালীন সময় সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের বিষয় দেখা যেতে পারে)।
খ) নির্বাচনকালীন সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্বাচকালীন সম্পর্কিত কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আগের তিন মাস ও পরের তিন মাস নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বদলি, পদোন্নতি, কর্তব্যে অবহেলার জন্য শাস্তি প্রদানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ হিসাবে কাজ করবে। এর জন্য সংবিধানের সংশোধনের কোনো প্রয়োজন পরবে না।
২। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন ও সংযোজনের যে ব্যবস্থা সময় সময় নিয়ে থাকে তা যথোপযুক্ত হয় না বলে জনমনে ধারণা। এ ক্ষেত্রে এনআইডি ও তার সংশোধন নিয়ে বহু বিভ্রান্তি ও হয়রানি আছে। এসব দূর করতে ভোটার তালিকা কেবল প্রকাশ্যে টানিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট হবে না, এখন প্রযুক্তির উন্নতির পর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে ভোটারদের সংশোধন-সংযোজনের সুযোগ দিতে হবে।
ক) বাংলাদেশ কোলাবরেটার্স (স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত কেউ ভোটার হতে পারবে না, হয়ে থাকলে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সংগঠনের সদস্য, ব্যক্তি, জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি ও মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা বাদ দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের এনআইডি প্রদান ও ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা, কর্মচারী, সুপারিশকারী জনপ্রতিনিধিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
খ) ইতোমধ্যেই প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ) পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
৩ । বর্তমান জনশুমারির ফলাফল প্রকাশের পরেই নির্বাচনী এলাকায় পুনঃনির্ধারণের প্রশ্ন আসবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে হবে।
৪। ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিটি নির্বাচন কমিশনকেই নির্বাচনে টাকার খেলা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন পক্ষান্তরে নির্বাচনী ব্যয়সীমা বাড়িয়ে চলেছে এবং নির্বাচনী খরচ নিয়ন্ত্রণে আগে ও পরে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
ক) ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে নির্বাচনী ব্যয়সীমা যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে আনতে পোস্টার, লিফলেট, ডিজিটাল প্রচার, রেডিও- টেলিভিশনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য আরপিও ও নির্বাচনী আচরণবিধিতে সুস্পষ্ট বিধান রাখতে হবে। এর প্রতিটি বিষয় পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন কমিশানকে রিপোর্ট প্রকাশের জন্য কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। নির্বাচন চলাকালীন সময়েই তাদের পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রার্থী বা তার প্রধান এজেন্টকে শুনানি করে নির্বাচন বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
খ) প্রার্থী বা তার হয়ে যে কেউই খরচ করুক না কেন সেটা প্রার্থীর ব্যয় হিসাবে গণ্য হবে। তা কোনোক্রমে নির্বাচনী ব্যয় সীমা অতিক্রম করবে না।
গ) প্রতি নির্বাচনী এলাকায় একজন নির্ধারিত কর্মকর্তা প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় মনিটর করবেন ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করবেন। এই রিপোর্টের সঙ্গে প্রার্থীর দেওয়া নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণী মিলিয়ে দেখা হবে।
ঘ) প্রার্থীর নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের বিবরণ সর্বসাধারণকে জ্ঞাত করার জন্য উন্মুক্ত দলিল হিসাবে রাখতে হবে এবং গণমাধ্যমসহ যে কেউ তা সংগ্রহ করতে পারবে।
ঙ) নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের হিসাবে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং ওই হিসাব না দেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সদস্যের শপথ গ্রহণ স্থগিত থাকবে।
চ) নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে নির্বাচনী এলাকা ভোটার সংখ্যা অনুসারে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, মার্কা সম্বলিত হ্যান্ডবিল, তিন কপি ভোটার তালিকা (সিডিসহ) সরবরাহ করবে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে নির্বাচন ম্যানিফেস্টোর ও মার্কা প্রচারের ব্যবস্থা করবে।
৫। নির্বাচনকে সন্ত্রাস পেশী শক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে।
৬। ওয়ার্কার্স পার্টি পূর্বের সকল প্রস্তাবে সংসদে প্রতিনিধিত্বের ধরণ ক্ষেত্রে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত রেখেছে। এটা করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তারপরও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে সংসদে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থিত।
৭ । নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হতে পারে, তার উদ্যোগ নিতে হবে।
৮। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনে নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল করতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও ধর্মকে ব্যবহারকারী কোনো দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৯। নির্বাচনে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত ও প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় প্রজেক্টশন সভার আয়োজন করবে ইসি।
১০। নির্বাচনকালীন একান্ত প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োগ করতে পারেন।
১১। সংস্কার সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহার করতে হবে।
+ There are no comments
Add yours