বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে দলটির মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তাফার নেতৃত্বে ১১টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)।
সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- দলের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মো. নুরুল আমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জসীমউদ্দিন তালুকদার, মো. রেজাউল করিম রীবন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এখলাস হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, নির্বাহী সদস্য মোফাক্কারুল ইসলাম পেলাব।
এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাদের প্রস্তাবগুলো হলোঃ
১. বাংলাদেশ ন্যাপ মনে করে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বিশ্বের প্রায় সব সংসদীয় গণতন্ত্রের রাষ্ট্রগুলোর মতোই বাংলাদেশেও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ আজ সময়ের দাবি।
২. গত ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
৩. বিদ্যমান আসন ভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি দল বা জোটের সারাদেশে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। তাহলে সংসদে বেশি সংখ্যক দলের প্রতিনিধিত্ব ও তুলনামূলকভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হবে।
৪. জাতীয় নির্বাচনের কমপক্ষে ৬ মাস আগে ভোটারদের হালনাগাদ তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
৫. রেমিট্যান্সযোদ্ধা অর্থাৎ প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও তাদের ভোট গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব করছি।
৬. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি শর্তাবলী সহজ করা। যেসব শর্ত সংবিধানের মৌল গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অসঙ্গতি পূর্ণ, আরপিও’র সেসব ধারা বাতিল করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একশতাংশ সমর্থনের বিধান রহিতকরার প্রস্তাব করছি।
৭. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেইংফিল্ড। সেক্ষেত্রে একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই লেভেল প্লেইংফিল্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। সেহেতু, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।
৮. অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও তারকা ব্যবসায়ীরা ন্যূনতম পাঁচ বছর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পরই কেবল তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।
৯. একটি আধুনিক ইলেকটরাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএমএস) অর্থাৎ আধুনিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন-
ক) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনকে রিটার্নিং অফিসার না করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা রিটার্নিং প্যানেল তৈরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এক জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে অবশ্যই এই প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ন্যাপ প্রস্তাব করছে।
খ) প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার পৌঁছানো থেকে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ ছাড়া প্রতিটি কক্ষে ও বুথে অনিয়ম রোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে লাইভ স্ত্রিমিং, রেকর্ডিং এবং কেন্দ্রের বাইরে প্রদর্শন করতে হবে। প্রার্থীদের এই সিসি টিভি লাইভ স্ক্রিমিং ও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে, যেন যেকোনো অনিয়মের অভিযোগ তাৎক্ষনিকভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।
গ) প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে পিপল কাউন্টিং মেশিন স্থাপন করে নির্বাচনের দিন মোট ভোটের যোগফলের সাথে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে আনতে হবে। যাতে করে কোনোভাবেই একজন ভোটার একের বেশি ভোট দিতে না পারেন।
ঘ) প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সম্মুখে কেন্দ্রতেই ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সার্টিফিকেট ইস্যু বাধ্যতামূলক হতে হবে।
১০. বাংলাদেশ ন্যাপ মনে করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। ভোটারদের মধ্যে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি না করে এটি চাপিয়ে দিলে সিদ্ধান্তটি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১১. বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখন সময় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রধান সহযোগী শক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
+ There are no comments
Add yours