বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গমাতার মতামত গুরুত্ব পেয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ের সহযোগিতায় আমার আব্বা মনে প্রাণে দেশের কাজটা করতে পেরেছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো…সেক্ষেত্রে আমার মা যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন, সেটাই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক হয়েছে। ‘ছয় দফা’ বাদ দিয়ে যদি ‘আট দফায়’ চলে যেত আওয়ামী লীগ, তাহলে এই দেশে কখনও মানুষের মুক্তি আসত না।
আজ (সোমবার) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় বঙ্গমাতা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের নবনির্মিত ১০ তলা ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেশের প্রতিটি জেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল করার নির্দেশনাও দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব ও সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় আমার মা ছিলেন আমার বাবার ছায়া সঙ্গী। বাবার আদর্শটাকে তিনি ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য ছিল, আমার মায়ের মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আমার দাদা-দাদির কথাও বলব। বাবা-মা বড় ছেলে কলকাতায় হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছেন, আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারত বড় ছেলে টাকা কামাই করে তাদের দেবেন। কিন্তু উল্টো তারা টাকা দিতেন এবং আমার মাও নিজের খরচের টাকা দিয়ে দিতেন। আব্বা এরকম জীবন সাথী ও বাবা-মা পেয়েছিলেন বলেই আমাদের দেশের সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা এবং স্বাধীনতা অর্জন সহজ হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বঙ্গবন্ধু লিখে দেন। সেই সময় তাদের বিয়ের কাবিন নামা থেকে বঙ্গমাতার জন্ম তারিখ জানা যায় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই থেকে মায়ের জন্মদিন আমরা ঘরোয়াভাবে পালন করতাম।
স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মানুষের বোধহয় একটা চরিত্র আছে, সরকারে কেউ থাকলে তার আশপাশে যারা থাকে, তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিটাকে খুব সুন্দরভাবে দেখাতে চেষ্টা করে।
সেই সময়ের একটা ঘটনার বর্ণনা করে তিনি বলেন, তখন চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। নগদ টাকা দিয়ে কেনা চাল বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। অথচ আমার আব্বা সবসময় সতর্ক ছিলেন। আমার মনে আছে, আমি পাশেই ছিলাম। বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই তিনি হিসাব নিতেন। খাদ্য সচিবকে দিয়ে কোন কোন গুদামে কত চাল আছে সেটার খবর নেওয়া এবং কী আনতে হবে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই উদ্যোগটা… নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হলো। কিন্তু আমেরিকা সেই জাহাজ আসতে দেয়নি। সেটা ঘুরিয়ে দিল… চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষটা অনেকটা মানুষ্য সৃষ্টই বলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার মায়ের সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। দেশের কোথায় কী হচ্ছে তিনি তা জানতেন। মা আব্বাকে বললেন চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। আব্বা অফিসে এসে খবর নিলেন। অফিসে একজন জানালো এটাতো অত দাম না, এই দাম। আব্বা মাকে বললেন আমিতো ওদের খবর নিতে বললাম ওরা বললো এত কম… একটা অল্প দাম বলা হলো। তখন মা আব্বাকে বললেন তোমাকে ঠিক তথ্য দেয়নি। তোমাকে টাকা দিচ্ছি, যে বলেছে তাকে বলো আমাকে এক মণ চাল কিনে দিতে। সত্যি টাকা দিলেন তিনি। কিন্তু ওইদামে আর চাল পাচ্ছে না। তখন মা আব্বাকে বললেন, এরা সবসময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তুমি এই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা, কিন্তু পাশে থেকে ছোট ছোট জিনিসগুলো আমার মা খেয়াল করছেন। তারপর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে চালের দাম কমে এসেছিল। ১০ টাকা কেজির চাল ৩ টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন তিনি।
+ There are no comments
Add yours