‘শেখ মুজিব বাঙালির অস্তিত্বের আশ্রয়’

Estimated read time 1 min read
Ad1

কিছু মানুষের বিশ্বাস থাকে যা অবিনশ্বর। এসব নামকে হৃদয়ের মমতা থেকে উপেক্ষা করার শক্তি কারও হয় না, – যদিও সমসাময়িক ব্যক্তি বা রাজনীতির স্বার্থে অনেকেই তা করার মূর্খতা দেখান। এই নামগুলো কবরের সীমানা পেরিয়ে, কালের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে, সোচ্চার এবং শক্তিধর হয়ে ঘরবাড়ি, মাঠঘাট, কল-কারখানা, বিদ্যালয়, ব্যবসাকেন্দ্র, সড়ক, মহাসড়ক এবং মহাকালের অস্তিত্বে টিকে থাকে। এই নামগুলো মহাপুরুষদের। এই মহাপুরুষরা যে কীর্তি রেখে যান, সেই কীর্তিকে অস্বীকার করার জো থাকে না। যদিও কখনো কখনো চলতি রাজনীতিস্বার্থে আমরা আত্মপ্রবঞ্চক বা আত্নঘাতী পর্যন্ত হই শাশ্বত সেই কীর্তিকে উপেক্ষা করতে।

শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে উচ্চারিত না হলে যে নামের উচ্চারণ প্রায় অসম্পূর্ণ থেকে যায়, বাঙালির জন্য তেমনি এক নাম। এই নামকে যেমন জোর করে প্রতিষ্ঠা দেবার প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি জোর করে মুছে দেওয়া সম্ভব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংট যেমন, চীনের মাও সেতুং যেমন, ভিয়েতনামের হো চি মিন যেমন, ভারতের মাহাত্না গান্ধী যেমন, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ যেমন, দক্ষিন আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলা যেমন, নামিবিয়ার স্যাম নজুমা যেমন, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো যেমন বাংলাদেশের তেমনি শেখ মুজিব। নামে এঁরা এক না হলেও কীর্তিতে এঁরা এক, গৌরবে এঁরা ভাস্বর।

হাজার বছরের যে বাঙ্গালি জাতি, কখনো বিচ্ছিন্ন কখনো পরাজিত, কখনো জাতিসত্তা অন্বেষণে বিভ্রান্ত এবং বিপর্যস্ত, সেই বাঙালির জন্যে প্রথম স্বাধীন-সার্বভৌম আবাসভূমির স্থপতির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। এই নাম শত্রুর কাছে যেমন সত্য, তেমনি সত্য মিত্রের কাছে, না হয় কখনো আমরা তা স্বীকার করার সাহস দেখাই, কখনো দেখাই না।

অনেক সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা নিয়েও শেখ মুজিব মহান এবং শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীদের অন্যতম, যিনি তার শ্রম, মেধা আর ত্যাগে পাকিস্তানের কঠোর সামরিক সৈরাচার, ধর্মীয় মিথ্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠিকে দুর্বার অধিকার সচেতন করে তুলেছিলেন। বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে তিনি শুধু শুরু করেননি, সেই আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন, অপ্রতিরোধ্য করেছিলেন এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাঝ দিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন অভাবিত এক সাফল্য। শেখ মুজিব হয়েছিলেন বাংলা ও বাঙালির আশা-আকাঙ্খার নাম, না হয় সে ইতিহাস কেউ জানতে চায় আবার কেউ চায় ঢাকতে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এক জাতি হয়েও বাঙালি কখনো এক হয়নি, হতে পারেনি। সুদীর্ঘ ইতিহাসে স্বশাসিত হবার বড় বেশী সুযোগও ঘটেনি বাঙালির। ধর্মীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সামাজিক কুসংস্কার, সঙ্কট লোভ দাসত্ব ইত্যাদি বার বার আঘাত করেছে বাঙালিকে। এক হয়ে মাথা তুলে তাই দাঁড়াতে পারেনি বাঙালি, স্ব শাসিত স্বাধীন হবার আশা তাই ম্লান হয়েছে দুর্ভাগ্যে। শেখ মুজিবই প্রথম সবল-সফল রাজনৈতিক পুরুষ, তিনি তাঁর অসাধারন প্রতিভাসম্পন্ন নেতৃত্বে বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন আপাদমস্তক ধর্মীয় গোড়ামী আর কুসংস্কারের উর্দ্ধে তুলতে পেরেছিলেন বলেই তার নেতৃত্ব শিল্পকলা বাঙালীকে এক আত্মা হয়ে, ইতিহাসে প্রথমবারের মত মুক্তিযুদ্ধে নামিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সাথে রক্তাক্ত শেষ নিঃশ্বাসে প্লাবিত হয়েছে তার পরিবারের প্রায় সকলকে, শিশুকে, বয়বৃক্ষকে, নববকে।

ঐ হত্যাকান্ড যে বাঙালীর ইতিহাসে বর্বরতম নিষ্ঠুরতম এক হত্যাকাণ্ড, কোন সন্দেহ নেই এতে। কিন্তু আমার বলার বিষয় তা নয়। মানুষ যখন জন্মায় তখন মৃত্যু তার `অবধারিত। শেখ মুজিব যখন বাঙালীর জাতিয়তাবাদীর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখনোও তিনি পাকিস্তানিদের হাতে প্রাণ দিতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে যখন তাকে পাকিস্তানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল তখনও তিনি প্রাণ হারাতে পারতেন। অতএব মৃত্যুটাই বড় নয়। বড় শেখ মুজিবকে মৃত্যুর পেছনের কারণ, তার ফলাফল এবং পরবর্তীতে বেরিয়ে আসা থলের বিড়াল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর রাজনৈতিক ইতিহাসের, এ যাবৎকালের শ্রেষ্ঠতম সফল পুরুষ, সন্দেহ নেই এ উচ্চাৰণে। কিন্তু স্বাধিনতার পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের যাঙ্গিয় কর্ণধার হিসাবে শেখ মুজিবের প্রশাসন, এও সত্য বিতর্ক বা আজ অন্তত বুঝতে পারছেন-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হআকান্ত তাঁদের প্রিয় মুক্তিযুদ্ধকে, তাদের অর্জিত অসাম্প্রদায়িক জাত চেতনাকে, তাদের লাখো ভালোবাসার শহীদের রক্তকে, সর্বোপরি বাংলা এবং বাঙালীত্বকে কোথায় নিয়ে আজ দাঁড় করিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যা পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করে বাংলাদেশ তৈরীর প্রত্যক্ষ প্রতিশোধ। জাতিগতভাবে আমরা, এই বাঙালীরা, এতটাই অযোগ্য যে, আমরা পারিনি হাজার বছরের সাধনার ফসল মহান মুক্তিযোদ্ধাকে, তার সম্মানকে, শহীদের রক্তকে, আশাকে, আদর্শ বিশ্বাসকে সংরক্ষন করতে। আমাদের অযোগ্যতার সীমানা যখন পাহাড় সমান, জাতি হিসাবে আমরা যখন আত্নঘাতি বা লাঞ্ছিত হতেও লজ্জাবোধ করিনি, তখন আজ একাত্তরের ঘাতক দালালদের আবার আমরা মুখোমুখি দেখবো, রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখবো, এই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু এত হতাশার পরও, এত ব্যর্থতার পরও আমি বিশ্বাস করি, নিঃশেষ হয়ে যাবেন না শেখ মুজিব আর মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালীর বিকাশ অথবা এই জাতির আত্নরক্ষার তাগিদেই মুক্তিযুদ্ধকে যেমন আঁকড়ে ধরতে হবে, একাত্তরের ঘাতক দালাল আর নব্য স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদীদের হাত থেকে নিজেদের যেমন রক্ষা করতে হবে, এবং আজ হোক কাল হোক, সসম্মানে সেই আসনেই বসাতে হবে শেখ মুজিবকে, যে আসন গৌরবের, এবং যে আসন একমাত্র তারই প্রাপ্য। মৌলবাদী পাকিস্তানপন্থীদের তৎপরতা যত বাড়বে, যত তাদের শক্তি সঞ্চারিত হবে, তত দ্রুত আশ্রয় খুজতে হবে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের কাছে, এবং সেই সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে। আমি বিশ্বাসে দৃঢ় যে, অগণিত দলমতে বিশ্বাসী হয়েও রাজনৈতিক কর্মপন্থায় নানামুখী ধারা বহন করেও, সম্মান আর আত্নরক্ষার তাগিদেই বাঙালীর বিভাজিত অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে আবার ফিরে যেতে হবে স্বাধীনতা পূর্ব গণআন্দোলনে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ বিশেষ দলে নেই, তিনি জাতির, এবং আমি একথাও বিশ্বাস করতে রাজি নই যে, ঐ মহাপ্রাণ ব্যক্তিটিকে শ্রদ্ধা জানাতে হলে কোন দলভুক্ত হবারও প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ নামে যার আস্থা, বাংলাদেশের হৃদয়ে যাঁর বিশ্বাস, বাঙ্গালীর শাশ্বত জাত্যভিমান পোষণকারী যে হৃদয়-তাঁর কাছেই শেখ মুজিব শ্রদ্ধার, ভালোবাসার, অহংকারের। যে বাঙ্গালীর হৃদয়ে দাসত্ব নেই, পরাধীনতা আর উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনায় লোভ নেই, সেই বাঙালীকেই গ্রহণ করে নিতে হবে শেখ মুজিবকে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে একজন বাঙালী হলেই যথেষ্ট- আর কিছু প্রয়োজন হয় না।

এবং আমি দিব্য চোখে দেখেছি, শেখ মুজিব আবার উঠে আসছেন টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে তাঁর বন্ধী শয়ন থেকে। কেউ আমরা চাই বা না চাই- ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই কুর্ণিশ করতে হবে তাঁকে, আবারও মেনে নিতে হবে তাঁর নেতৃত্ব, নাহয় বড্ড দেরীই হয়ে গেছে।

সম্প্রতি বিবিসি’র সারা বিশ্বের শ্রোতা জরিপের মাধ্যমে শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বীকৃতি আবারও প্রমাণ করলো ইতিহাস বিকৃত করার প্রচেষ্টকারীরা শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারে না। বাংলার প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে অঙ্কিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জীবন-মরণের সীমানা অতিক্রম করে আজ মৃত্যুঞ্জয়ী।

জীবিত মুজিবের চেয়ে মৃত মুজিব অনেক শক্তিশালী তার প্রমাণ তাঁর ছবি বাংলাদেশের সরকারী অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা এবং তাঁর নাম উচ্চারণে অনেকের অনীহা। বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নাম বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের অস্তিত্বের মূলে আঘাত হানতে সক্ষম।

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সমৃদ্ধ শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ‘খোকা’ নামের সেই ছেলেটি যিনি বড় হয়ে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯২০ থেকে ১৯৭১ এই দীর্ঘ ৫১ বছর সময়ের মধ্যে ২৭ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নকালে বঙ্গবন্ধু শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথম গ্রেফতার হন ও কারাবরণ করেন। এদেশের মানার মুক্তির লক্ষ্যে ও ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধু তার জীবন করেছিলেন। জেলের অভ্যন্তরে থেকেও বঙ্গবন্ধু মহান ভাষা আন্দোলনে উৎসাহ ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। ৫৮ সালে স্বৈরাচারী সামরিক শাসক আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে আবার কারাগারে নিক্ষেপ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ, নির্যাতন বঙ্গবন্ধুকে এদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণে উজ্জীবিত করে। তাই, ১৯৬৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাঙালিদের মুক্তির সনদ ৬ দশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ও আইনসভার সার্বভৌমত্ব, দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি, বাঙালিদো আলাদা ষ্টেট ব্যাংক, খাজনা-ট্যাক্স-কর, দুই অঞ্চলের আলাদা মুদ্রা ও বাঙালি প্যারামিলিটারী গঠন সবই এই ভূখন্ডের সার্বভৌমত্ব তৎ স্বাধীনতা অর্জনের মূল ভিত্তি হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্বখেদে বলেছিলেন, “বাঙ্গালীর কোন ইতিহাস নেই,’ এই খেদ ও বেদনা শুধুমাত্র তারই ছিল না ছিল বিশ্বকবির, ছিল নেতাজী সুভাস বসু, ছিল কোটি কোটি বাঙ্গালীর।

“বাঙ্গালির শতবর্ষের জমাট বাঁধা কালিমা, গ্লানি, অপবাদ দূর করতে আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। স্বতন্ত্র ও স্বাধীন আবাসভূমি, সজুর প্রেক্ষাপটে উদীয়মান রক্তিম সূর্য খচিত পতাকা যে নেতা বাঙ্গালিদের উপহার দিলেন তিনিই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মান। বিশ্ব নেতৃত্বের যারা শ্রেষ্ঠতম তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হল বঙ্গবন্ধুর নাম। জর্জ ওয়াশিংটন, লেনিন, মহাত্মা গান্ধী, মাও সেং, হো চি মিন, লেনসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে উচ্চারিত হলো বঙ্গবন্ধুর নাম। তিনি আমাদের অহঙ্কার।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধুপরামর্শক্রমে “স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয়, ১৯৭১ এর ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়।৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।” এই ঐতিহাসিক ভাষণ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা। ৭১ এর ২৩শে মার্চ সারা দেশে “পাকিস্তান দিবস” পালন উপলক্ষে পাকিস্তানী পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এমনকি বিদেশী দূতাবাসগুলোও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাত ১২টা পার হবার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী বঙ্গবন্ধুর বন্ধু মোর্শেদ সাহেবের মাধ্যমে ই পি আর ওয়ারলেস সেটের সাহায্যে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এম এ হান্নান কালুরঘাটে স্বাধীনতা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন। ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় এম এ হান্নানই তার প্রতিষ্ঠিত কালুরঘাটস্থ বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। পরদিন ২৭শে মার্চ ঐ বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয় দফা স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ “রেডিও পাকিস্তান” এর বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন, “মুজিব ও তার দল পাকিস্তানের দুশমন, তারা পূর্ব পাকিস্তানকে সার্বিকভাবে পৃথক করতে চান। এ কারণে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।”

তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের একটি লেখা ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায়” প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে তিনি লিখেছিলেন, “বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীণ সিগন্যাল হিসেবে মনে হল। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম,” বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে এ গ্রীণ সিগন্যালের কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন, জিয়া বেঁচে থাকার সময় নিজেকে কখনোও স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেননি। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সকল দল, মত ও বিতর্কের উর্দ্ধে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। তাই, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণা সম্বলিত বক্তব্যতে ছিল পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়ানোর দিক নির্দেশনা এবং পরবর্তীতে করণীয় হিসেবে বাঙালিদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর উপদেশ, কবি সুকান্তের কবিতার ন্যায় বঙ্গবন্ধুও সেদিন রেসকোর্সের মরদানে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন যা শ্রেষ্ঠ কবিতা হিসেবে বিবেচিত। সুকান্তের কবিতা

“ওঠো! সম্মুখে এবার এগিয়ে চল

কাঁদুনে গ্যাস আর বোমার আঘাত

যতই যাতনা দিক

শত বছরের আর দাসত্ব নয়

নয়, আর নয় একটিও দিন, একটি ঘন্টা নয়’

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের অংশ…..

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।

আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়,

বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়,

 বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়…

আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি

তোমাদের যার যা কিছু আছে

তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে

এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”

মহান নেতার এ আহবানে শুরু হয় ন’মাস ব্যাপী রক্তক্ষরী সংগ্রাম, বাংলার স্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ও তাঁর নামে হাজার বছরের বন্দী বাঙালি প্রথম দাসত্ব শৃঙ্খল মুক্ত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য। যারা সততা চেয়েছিল, মানুষের কল্যাণ চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধু তাদেরই একজন। সক্রেটিস, যীশু থেকে আব্রাহাম লিঙ্কন, লিঙ্কন থেকে গান্ধী, সক্রেটিস লুথারকিং অবশেষে ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লিঙ্কনের যে কথাটি যাকে বলে ‘Government of the people, by the people, for the people, shall not perish from the earth’ তাই, সক্রেটিস লুথারকিং, শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই, এরা চিরজীবী।

ডাঃ শেখ শফিউল আজম

সাবেক সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ
সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন
ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours