জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিমের বাবার নামে সাভারে চলছে স্কুল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮৪ সালে এই স্কুলেই বাবার কুলখানি করেন মেজর ডালিম। নিজ হাতে খাবারও পরিবেশন করেন। সেই থেকে তার বাবা সামসুল হকের নামে নামকরণ করা স্কুলেই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির অবস্থান সাভারের ভার্কুতা ইউনিয়নের মুশুরীখোলা এলাকায়। দূর থেকেই বড় বড় অক্ষরে চোখে ভাসে মশুরীখোলা সামসুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম। এই সামসুল হক হলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর ডালিমের বাবা। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সামসুল হক ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ডালিমের বাবার কুলখানি : বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এসএম নজরুল ইসলাম। ১৯৮৪ সালে একই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এই স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন ১৯৮৪ সাল। ১৯৮২ সালে মেজর ডালিমের বাবা মারা যান। পরে ১৯৮৪ সালে ডালিম তার বাবা সামসুল হকের কুলখানির আয়োজন করেন। কুলখানির দিন একটি জিপ গাড়িতে করে ডালিম ও তার ছোট ভাই কামরুল হক স্বপন আসেন এই স্কুলে। এখানে হাজার খানেক মানুষকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি, তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি : ১৯৬৮ থেকে সামসুল হকের পরবিারের লোকজনই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘ সময়। প্রতিষ্ঠাকালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন মেজর ডালিমের মামা ইমান আলী। তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর এই দায়িত্ব নেন ইমান আলীর ছেলে লুৎফুল কবির। এরপরই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মেজর ডালিমের ভাই কামরুল হক স্বপন। পর্যায়ক্রমে আব্দুল গফুর নায়েব, জামাল উদ্দিন সরকার, ইউএনও, সালাউদ্দিন নাগরী, আব্দুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন।
২০২০ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের প্রথম উদ্যোগ নেন। তবে কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পাওয়ায় উদ্যোগ বাতিল হয়। সেখানেই থেমে যায় নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম। সবশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ে নাম পরিবর্তনের আবেদন করে স্কুল কমিটি।
অনুদান : প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টি এমপিও সুবিধা ছাড়া প্রায় সকল সুবিধা বঞ্চিত ছিল। সর্বশেষ চলতি বছরে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করায় প্রায় ৯৮ লাখ টাকা অনুদান পায় স্কুলটি। এই টাকায় স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।
প্রধান শিক্ষক এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন একটি স্কুলের শিক্ষক যে পরিচয় দিতেও লজ্জা হয়। মেজর ডালিমের বাবার নামের স্কুলে আমরা শিক্ষকতা করি এটা লজ্জাজনক।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করছেন।
+ There are no comments
Add yours