চট্টগ্রামের কালচারাল হেরিটেজ সিআরবিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি স্থগিতের জন্য রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও এমপিরা।
তারা হাসপাতালটি রেলের অন্য জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নেরও অনুরোধ জানান রেলমন্ত্রীকে। বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে চট্টগ্রামের সকল জনসাধারণের পক্ষ হতে মন্ত্রী এমপিরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ স্থগিত করে রেলওয়ের অন্যত্র জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান রেল মন্ত্রীকে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চট্টগ্রামের সাবেক ও বর্তমান তিন মন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
এছাড়া চিঠিতে ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি স্বাক্ষর করেছেন।
চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায় পিপিপির আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় রেলমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানানো হয় চিঠিতে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এটিকে কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮টি নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিআরবির কোনো অংশ ব্যবহার করা যাবে না এবং এখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পাখির অভয়ারণ্য, জাদুঘর, প্রজাপতি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সব কিছু মিলিয়ে সিআরবি এখন চট্টগ্রামের সব মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
এখানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগটি সংশ্লিষ্ট গেজেটের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিষয়টিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতাল স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী আশান্বিত হয়েছেন, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
রেল মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরে একসময় অনেক পাহাড়, দীঘি, পুকুর ছিল। ছিল শাল, রেইন ট্রি ইত্যাদি বৃক্ষ আচ্ছাদিত রাস্তা। ছিল বাটালী হিল, কাছারি পাহাড়। পাকিস্তান আমলে বাটালী হিল ধ্বংস করা হয়েছে। কাছারি পাহাড়ের ওপরও আঘাত হেনেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এ কাছারি পাহাড়ের বিশাল অংশ কেটে তৈরি করা হয় নিউ মার্কেট, জেনারেল পোস্ট অফিস ও স্টেট ব্যাংক। এভাবেই চট্টগ্রামের নিসর্গ, সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে কালক্রমে। এখন অবশিষ্ট আছে শুধু সিআরবি। পরিবেশ অধিদফতর এখানে হাসপাতাল নির্মাণ না করা ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে মতামত প্রদান করেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের ব্যানারে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরের দাবিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট তাঁরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন প্রেরণ করেন। ২০২১ সালের ৬ আগস্ট তাঁরা আপনার বরাবরেও একটি আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বেশ কিছু নিবন্ধ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours