চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন প্রাণ হারায়। দীর্ঘ নয় বছর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচার কাজ শেষ হয়নি।
তবে মামলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।
২০১০ সালে এম এ মান্নান (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়ার র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সোমবার বিকেলে ঢাকার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই জন। এ ঘটনার পর দীর্ঘ ৯ বছর পেরেয়ি গেলেও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে গার্ডার ধসে ১৩ জন নিহতের ঘটনার বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতারের সে সময়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনজুরুল ইসলাম, প্রকল্প প্রকৌশলী আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, আব্দুল হাই, মো. মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, মান নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী শাহজান আলী ও রফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্ত শেষে পুলিশ তার নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত করেন।
এ বিষয়ে টিআইবি ও সনাক চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ধসে যে মানুষগুলো মারা গেছেন তাদের আপনজনরা বিচার না পেয়ে দুঃখ-কষ্ট বুকে চাপা ক্ষোভ নিয়েই চলে যাবেন।
হয়তো বিচার কোনদিন তারা দেখে যেতে পারবেন না। দুবৃত্তায়ন যদি সর্বব্যাপী হয়, সর্বগ্রাসী হয় তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে। তখন আমাদের বিচার ব্যবস্থাকেও অকার্যকর করে দেয়। শাসনের গণমুখী দিকটাকে অকার্যকর করে দেয়। সবদিকে মিলিয়ে তখন জনগণ আর প্রজাতন্ত্রের মালিকানা উপলব্ধি করতে পারে না।
তিনি বলেন, যখন সমাজে দুর্বৃত্ত বেশি হয়ে যায় তখন আইন-আদালত সবকিছুকে কবজা করে ফেলে তারা। ঢাকার ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি করা হয় জনরোষ স্তিমিত করার জন্য। কাজেই ফ্লাইওভারে ঘটনায় বিচারব্যস্থাকে এই প্রভাবশালী দুর্বৃত্তরা প্রলম্বিত করে। আসলে যে দেশে সাধারণ মানুষ বিচার পায় না, সেদশের মানুষ দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে পারে না। এটাও একধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এরজন্যই দুর্বৃত্তরা দিন দিন বাড়ছে এবং বেপরোয়া হয়ে গেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই বছরের ২৬ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার তৎকালীন এসআই আবুল কালাম আজাদ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমসের ১০ জন এবং বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটসের ১২ জন। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে সিডিএর তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন জন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিনসহ ১৮ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৮ জুন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমান অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আট আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বর্তমানে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
+ There are no comments
Add yours