আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?

Estimated read time 1 min read
Ad1

যারা খুনিদের আশ্রয় দেয়, তারাই মানবতার ছবক শেখায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ যখন চারদিক থেকে মানবাধিকারের প্রশ্ন আসে। মানবাধিকারের কথা বলা হয়। আমাদের সরকারকে মানবাধিকারের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। যারা এই প্রশ্ন করে তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আমাদের মানবাধিকার, ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?

আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। আমার বাবা-মা হারিয়েছি। আমরা মামলা করতে পারব না। আমি বিচার চাইতে পারব না। কেন? আমরা দেশের নাগরিক না? আমি আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। বেঁচে গিয়েছিলাম ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত থেকে। এই বাঁচা কত যন্ত্রণার বাঁচা যারা বাঁচে তারা জানে।

তিনি বলেন, আমাদের মানবাধিকার যে লঙ্ঘন করা হয়েছিলো? ৯৬ সালে যদি সরকারের আসতে না পারতাম, যদি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে না পারতাম, এই হত্যার বিচার কোনো দিন হত না। বার বার বাধা এসেছে। এমনকি বক্তৃতা দিয়ে বিচার চাইতে যেও বাধা পেয়েছি। যে এই কথা বললে নাকি কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারব না। এ রকম কথাও আমাকে শুনতে হয়েছে। আমি বাধা মানিনি। আমি দাবিতে সোচ্চার হয়েছি। দেশে-বিদেশে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি।

সরকার প্রধান বলেন, সর্ব প্রথম এই হত্যার প্রতিবাদ করে বক্তব্য দিয়েছে রেহানা। ৮৯ সালে সুইডেনে। এরপর আমি ৮০ সালে বিদেশে গেছি। একটা কমিশন গঠন করেছি, চেষ্টা করেছি আন্তর্জাতিকভাবে। তখন তো দেশে আসতে পারিনি, আমাকে আসতে দেওয়া হবে না। ৮১ সালে দেশে আসার পর জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। অপপ্রচার চালানো হয়েছে আমার বাবার নামে, ভাইয়ের নামে, মায়ের নামে মিথ্যা অপপ্রচার। কোথায় সেগুলো? কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। তারপরও যখন দেখে যে না বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু নিয়ে যাননি। শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন। একটা জাতি দিয়ে গেছেন। পরিচয় দিয়ে গেছেন। আত্ম পরিচয় দিয়ে গেছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। বাংলাদেশের গরিব মানুষকে যে রিলিফের কাপড় তিনি দিতে পারতেন সেই রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সে কাপড় দিয়ে তাকে কাফন দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবা-মা, ভাই-বোন বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে কিছুই নিয়ে যায়নি। ওই ১৬ তারিখে সমস্ত লাশ নিয়ে বনানীতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বিচারের বাণী তো নিভৃতে কাঁদে। আমি ফিরে এসেও তো বিচার করতে পারিনি। আমি ৮১ সালে দেশে এসেছি, ৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়েছি। এই সময়ে কতবার ওই হাইকোর্টে গিয়েছি, বক্তৃতা দিয়েছি। বিচারিক আদালতে গেছি। আমাদের তো মামলা করারও অধিকার ছিল না। কারণ ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।

আমার প্রশ্ন আমাদের মানবাধিকার কোথায়? কার কাছে বিচার চাইব? যারা খুনিদের লালন-পালন করল, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, খুনি বা কোন কোন সন্ত্রাসী, জঙ্গি তাদের মানবাধিকার নিয়ে এরা ব্যস্ত। বিএনপিতো এদের মদদদাতা, লালন-পালনকারী।

দুর্নীতির অপবাদের পরে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ আমার কোন শক্তি নেই, অর্থ সম্পদ নেই। তবে আমার শক্তি আছে, সেটা জনতার শক্তি। সেই শক্তি ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। প্রমাণ করেছি নিজের ভাগ্য করতে আসেনি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি।

করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমেরিকা-রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আমদানির প্রতিটি পণ্য মূল্য বেড়েছে।

সংকটের কারণে ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়েছি তেলের দাম বাড়াতে। কারণ তেলের দাম সবসময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হয়। আমাদের টাকা যখন শক্তিশালী ছিল… ডলারের দাম বিশ্বব্যাপী বাড়াতে আমরাও বাধ্য হয়েছি টাকার মান সামঞ্জস্য করতে। তেলের দামও বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে। আমরা কত টাকা আর ভর্তুকি দেব? তারপরও তেলের দাম বাড়িয়েছি। আমি জানি দাম বাড়াতে দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে।এটা উপলব্ধি করতে পারি। এটা বুঝি। যে কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহ করব। ১ কোটি পারিবারিক কার্ড দেব যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে ডাল, ডাল, তেল, চিনি কিনতে পারে। যার যেটা পছন্দ সেটা কিনতে পারবেন।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours