দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল চা। আর এই চা শিল্পের অন্যতম অঞ্চল সিলেট। পরিকল্পিত চাষ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বিগত বছরে সিলেটে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
তবে এবার ভরা মৌসুমে শ্রমিক আন্দোলনের ফলে শতকোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন সংশ্লিষ্টরা। দফায় দফায় বৈঠকের পরও শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্তে এখনো অনড়।
বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি গাছ থেকে একবার কচি পাতা তোলার পরবর্তী সাত থেকে নয় দিন ওই গাছ থেকে আর পাতা তোলা হয় না। তখন সেখানে নতুন কুঁড়ি ও পাতা আসে।
নতুন পাতা আসার তিন দিনের মধ্যেই তা তুলতে হয়। একবার পাতা তোলাকে বলা হয় ‘এক রাউন্ড’। পাতা বড় হয়ে গেলে গুণগত মান ভালো থাকে না। বড় পাতা অনেক সময় বাগান কর্তৃপক্ষ আর তোলে না। কারণ, এতে তাদের উৎপাদন খরচও আসে না।
নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পাতায় ভাটা থাকে। গাছে কচি পাতার পরিমাণ থাকে অনেক কম। শ্রমিকরা এ সময় দৈনিক সর্বোচ্চ ১৪-১৫ কেজি পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে এই সময়ে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকাও তুলতে পারেন না শ্রমিকরা।
ভরা মৌসুমের একটু বাড়তি আয়ই ভাটার সময়ে ‘সম্বল’ হিসেবে কাজ করে শ্রমিকদের জন্য। জানুয়ারি থেকে মে মাস শুরু পর্যন্ত শ্রমিকরা বাগানের অন্যান্য কাজে যোগ দেন। এই আগস্টের মাঝামাঝিতে এসে বাগানের পাতা গাছেই বড় হচ্ছে। তোলার কেউ নেই।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ভরা মৌসুমে চা-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যাওয়ায় কচি পাতা তোলা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। এই সময় শ্রমিকরা বাগান নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি পাতা তুলতে পারেন। ফলে তাদের মজুরিও বেশি আসে।
এই সময়ে কাজে যোগ না দিয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক চা-শ্রমিকরা যেমন অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ঠিক তেমনি পাতা বড় হয়ে গেলে চায়ের গুণগত মান বজায় থাকে না বিধায় মালিকও ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের ১৬৭ চা-বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। গত ৯ আগস্ট এ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে প্রথম কয়েকদিন কেবল দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। সে সময় মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে বৈঠক বা সমঝোতায় না আসায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। দফায় দফায় বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক সমাধানে যায়নি এই সংকট।
+ There are no comments
Add yours