ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা আনতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে তেলবীজ সরবরাহ করবে সরকার। আগামী মৌসুমে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, তিল, নারিকেলের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি সভাও করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। আর ভোজ্যতেলের মধ্যে দেশ সয়াবিনের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়।
অন্যদিকে দেশে চাহিদার যে অংশ ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়ে থাকে, তা মূলত সরিষা থেকে পাওয়া যায়। সরকার চাইছে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই তেলের উৎপাদন বাড়াতে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে, বীজ নিয়ে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় তেলবীজ সংগ্রহের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া প্রণোদনার বিষয়টিও উঠে আসে।
জানা গেছে, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ মেয়াদে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা করেছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, তিল, নারিকেল ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বিনা) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তেলবীজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সূর্যমুখীর হাইব্রিড (এফ-১) জাত, নারিকেলের দেশি উফশী জাত এবং বারি ও বিনার উদ্ভাবিত তেল জাতীয় ফসলের উফশী জাত প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
এছাড়া রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার (২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫) সঙ্গে সংযুক্ত একীভূত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করারও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সংগ্রহ করা বীজ কীভাবে চাষি পর্যায়ে যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগ্রহ করা তেল বীজ জাতভিত্তিক ও অঞ্চলভিত্তিক সময়মতো সরবরাহের লক্ষ্যে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিএই ১টি রোডম্যাপ প্রস্তুত করবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠ পর্যায়ে কৃষদের কাছে বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ভোজ্যতেলের ৪০ শতাংশ দেশি উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করার বিষয়ে আমাদের ৩ বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা আছে। সেজন্য বিএডিসির বীজ আমরা প্রণোদনার মাধ্যমে দিয়ে দেব। বিনামূল্যে কৃষকরা এ বীজ পাবেন।
তিনি জানান, সরকার কৃষি উৎপাদনের দিকে জোর দিয়েছে। সেজন্য সরকার এগুলো বিনামূল্যে দেবে। আগামী মৌসুম থেকে এসব বীজ দেওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ আমনের পরে যে মৌসুম আসবে, সে সময় বীজ লাগানো যাবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, সারাদেশে এটি বাস্তবায়ন হবে। ডিইর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন হবে, আর বীজ বিতরণ করবে বিএডিসি। কৃষক পর্যায়েও কিছু বীজ সংগ্রহ করা হবে। সরকারিভাবে যে বীজ আমরা প্রণোদনা দেবো সেটা মূলত বিএডিসির স্টোরে থাকবে। সেগুলোই মূলত বিতরণ করা হবে।
+ There are no comments
Add yours