অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের পর বিদেশে পাচারকারী চক্রের তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
চক্রটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে আকর্ষণীয় বোনাস অফার করে থাকে। ৩০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, ৫০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার, ১০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা। এভাবে ৮০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করা হয়। এভাবে এক বছরে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা নিয়মিত মামলায় আজ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ তাদের আদালতে পাঠানো করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন ও সাতটি সিম কার্ড জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন— সাদ্দাম হোসেন মিজি (৩৬), সহিদুল ইসলাম আলমগীর (৩৭) ও আলমগীর খান (৩৫)।
এ ধরনের প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিতে দুটি পরামর্শ দিয়েছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
- অধিক মুনাফার আশায় অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ে না জড়ানো।
- নাম সর্বস্ব সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ না করা।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ জানান, নিয়মিত সাইবার পেট্রোলিং ও অনলাইনে নজরদারির মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী চক্রের তিন সাইবার অপরাধীকে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
অনলাইনে https://www.psg111.com/#/home সাইট ও PSG football নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিল চক্রটি। সুপার অ্যাডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশকিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে।
জানা যায়, এজেন্টরা প্রথম স্তরের রেফারেল কমিশন ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় স্তরের রেফারেল কমিশন ৪ শতাংশ কমিশন এবং তৃতীয় স্তরের রেফারেল সদস্যদের কাজ থেকে ২ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে।
একজন নতুন গ্রাহকের একাউন্ট খুলতে তারা ৩২০০ টাকা করে নেয়। নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার পর তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ডিপোজিট বা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তিন দিনের জন্য বিনিয়োগে ২.৭ শতাংশ, সাত দিনের জন্য বিনিয়োগে ২.৮ শতাংশ, ১৫ দিনের জন্য বিনিয়োগে ২.৯ শতাংশ, ২৮ দিনের জন্য বিনিয়োগে ৩ শতাংশ, ৪৫ দিনের জন্য বিনিয়োগে ৩.১ শতাংশ প্রতিদিন মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। গ্রাহকরা বেশি মুনাফায় আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ করে।
৩০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ৩৬০০ টাকা, ৫০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতিমাসে ৭৫০০ টাকা, ১০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা, ৩০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ৫৪ হাজার টাকা, ৫০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে এক লাখ টাকা, ৮০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা মাসিক আয়ের অফার করে থাকে।
গ্রেপ্তাররা নিজেরা অভ্যন্তরীণ কথা বার্তা ও যোগাযোগের জন্য P.S.G.MD SADDAM mizi নামে প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করত।
গ্রেপ্তার সাদ্দাম হোসেন মিজি (৩৬) https://www.psa111.com/#/home সাইট ও PSG football এর একজন এজেন্ট এবং সহিদুল ইসলাম আলমগীর (৩৭) ও আলমগীর খান (৩৫) তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সাদ্দাম হোসেন মিজি বিভিন্ন এলাকা থেকে ইউজার সংগ্রহ করে https://www.psg111.com/#/home সাইট ও PSG football নামের মোবাইল অ্যাপের অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করত। বিনিময়ে তিনি মোটা অংকের একটি কমিশন পেতেন। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেত। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স খাতের ওপর।
+ There are no comments
Add yours