চন্দনাইশের মিনি সুন্দরবন ধোপাছড়ি

Estimated read time 1 min read
Ad1

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার একটি পার্বত্য ইউনিয়নের নাম ধোপাছড়ি। যাকে বলা হয় মিনি – সুন্দরবন। পাহাড় পর্বত নদী ঘেরা চন্দনাইশের ধোপাছড়িকে ঘিরে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে।

চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত ধোপাছড়িতে ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা পাহাড়। ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, দক্ষিণে সাতকানিয়া, উত্তরে রাঙ্গুনিয়া। ইউনিয়নটির দক্ষিণ পার্শ্বে শঙ্খ নদী বয়ে গেছে। পাহাড় নদীর মধ্যখানে দেখা যায় মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা।

No description available.

ইউনিয়নের পুরো এলাকা জুড়ে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও মৌসুমী শাকসবজি। সারি সারি বনজ গাজ নজর কাড়বে যে কারো। চারদিকে নদী আর পাহাড় ঘেরা দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়িতে যাওয়ার এখনও একমাত্র পথ হচ্ছে নদীপথ।

শঙ্খ নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ছাড়া এখানে সরাসরি যাওয়া যায় না। তবে সম্প্রতি সিএনজি অটোরিকশা অথবা চাঁদের গাড়িতে কিছু কিছু যাওয়া গেলেও স্থানে স্থানে তিনবার পার হতে হবে শঙ্খ নদী। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সীমান্তসংলগ্ন পাহাড় ও নদীবেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি অঞ্চল ধোপাছড়িকে বলা হয় চট্টগ্রামের সুন্দরবন চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে ঘেরা ধোপাছড়িতে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য অকৃপণভাবে ঢেলে দিয়েছে।

এরপরও অনিন্দ্য সুন্দর, সম্ভাবনাময় পাহাড়ি এ অঞ্চলটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ধোপাছড়ি ইউনিয়নের আয়তন ১৪ হাজার ২৭৭ বর্গ একর।

No description available.

এর পূর্ব সীমান্তে বান্দরবান, উত্তর সীমান্তে রাঙ্গুনিয়া ও দক্ষিণ সীমান্তে সাতকানিয়ার অবস্থান। বিশাল এই ইউনিয়নটিতে যাওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে নদীপথ। এর দক্ষিণ পাশে বয়ে গেছে শঙ্খ নদী। নদীপথে ধোপাছড়িতে যাওয়ার সময় আকাশ পাহাড় নদীকে এক সাথে দেখতে অপূর্ব দেখায়। দেখলে মনে হবে আকাশের মেঘ পাহাড়কে আলিঙ্গন করছে যার প্রত্যক্ষদর্শী যেন নদী! প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এ স্থান ঘুরতে গেলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।

নৌপথে ধোপাছড়ি ভ্রমণ করতে গেলে রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে। এখানে উপজাতীয়রা নিজেদের থাকার জন্য গড়ে তুলেছে বাঁশের কুটির ও কঞ্চি দিয়ে ভাসমান ঘর। চলাচলের আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ের রঙিন ও সাদা মাটি, উঁচু-নিচু পাহাড় সবকিছুই উপভোগ্য। শীত মওসুমে অতিথি পাখির কলতানে প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরো আকর্ষণীয়। বর্ষা মওসুমে নীল মেঘে ঢাকা থাকে এ পাহাড়ি অঞ্চল।

বনফুলের সুবাস নাকে ভেসে আসে। আকাশ ঢেকে থাকে অসংখ্য তারায়। এখানে জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ নেমে আসে মাথার উপরে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও জোনাকির আলো পাহাড়ি পরিবেশকে করে তোলে আরো প্রাণবন্ত। ধোপাছড়ির পাহাড়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের বৃহৎ সেগুন বাগান।

এখানে বুনো গাছ ছাড়াও ফলদ ও ভেষজ গাছের বাগান রয়েছে। বছরভরে পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারা, লেবু, আদা, বাউকুল, আপেলকুল, আম, লিচু, কলাসহ বিভিন্ন ফলমূল, মওসুমি শাকসবজি ও শস্য উৎপন্ন হয়। এখানকার বিস্তীর্ণ পাহাড়ে গড়ে উঠতে পারে বিনোদন কেন্দ্র, বনায়ন কেন্দ্র, বন গবেষণাগার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মৎস্য চাষ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পাখির অভয়ারণ্য ইত্যাদি।

সুন্দরবনের আদলে গড়ে উঠা ধোপাছড়িতে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট কোন দর্শনীয় স্থান না থাকলেও এখানকার সেগুন, গর্জন, গামারি, চাপালিশ, একাশি সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান যে কারো মন কেড়ে নেবে প্রথম দর্শনে।

এক কথায় বলা যায় পুরো ধোপাছড়িটাই যেন একটি বোটানিকেল গার্ডেন এবং পাহাড়ের নিম্মাংশে যেন সবজির ভান্ডার। ধোপাছড়িতে যাতায়াতের জন্য নির্মানাধীন খাঁনহাট- ধোপাছড়ি- বান্দরবান সড়কটি নির্মাণ কাজ গত দুই যুগেও শেষ হয়নি।

এ সড়কটি গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট থেকে শুরু হয়ে মংলার মুখ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণাধীন এ সড়কটির কাজ শেষ করলেই প্রতিষ্ঠিত হবে ধোপাছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সে সাথে ধোপাছড়ি- দোহাজারী ধোপাছড়ি নদীপথে দ্রুত গতির ইঞ্জিনবোট চালু করা হলেই চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে ধোপাছড়ির সাথে। পাহাড়ের উঁচু নিচু বুক ছিড়ে এঁকে বেঁকে গেছে পিচ ঢালা পথ।

আকাশে ভেসে বেড়ায় নীল-সাদা মেঘের বেলা। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ছেয়ে আছে কারো প্রতীক্ষায়। এ অবিরাম নৈর্সগিক সৌন্দর্যের ধোপাছড়ি হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের বৃহত্তম সেগুন বাগান এই ধোপাছড়িতেই রয়েছে। আর এসব সেগুন বাগান রক্ষায় এই ধোপাছড়ি ইউনিয়নেই রয়েছে বনবিভাগের দুটি বনবিট এবং একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র।

একটি ইউনিয়নে দুটি বনবিট স্থাপনের দৃষ্ঠান্ত দেশের আর কোথাও নেই। এ থেকে বোঝা যায়, বনজ সম্পদের দিক দিয়ে ধোপাছড়ি কতোটুকু সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। ১৯২৬, ১৯৪২ এবং ১৯৬৩ সালে তৈরি করে সেগুন বাগান রয়েছে এই বনাঞ্চলে এদিকে এখানকার ৭ হাজার একরের বিশাল বনাঞ্চল রক্ষা করতে বনবিভাগের স্বল্প সংখ্যক জনবলের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে ধোপাছড়িকে ঘিরে দীর্ঘ সময় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গাছ চোরের সিন্ডিকেট। এ গাছ চোরেরা মূলত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে গাছ কেটে অনেকে কোটিপতি হয়ে গেছে।

ফলে এ বনভূমির প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষা হচ্ছে না যথাযথভাবে। ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষরা বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪ দশক পেরিয়ে গেলেও এই ধোপাছড়ির উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয়নি।

সবচেয়ে দূঃখের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘ এই সময়ে এখানে সরাসরি সড়ক যোগাযোগে কোন ব্যবস্থা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। কোন সরকারের আমলেই কোন জনপ্রতিনিধিই এই ধোপাছড়ির উন্নয়নে এগিয়ে আসেনি।

ফলে অপার সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলটি বরাবরই অবহেলিত থেকে গেছে। তাই সরকারের কাছে সকলের দাবি, ধোপাছড়িকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করার।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours