বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
যতই সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসছে ততই ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক। দেখা মিলেছে একাধিক পদপ্রার্থীর।
বিগত সময়ে কমিটি ঘোষণার আগে কয়েকজন নেতার নাম আলেচনায় আসলেও এবার তার ভিন্ন চিত্র। কেউই জানে না কে আসবেন নেতৃত্বে। কে হবেন আগামী দিনের ছাত্রলীগের কান্ডারি তা নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবিরে যারা এগিয়ে আছেন তারা কি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে এগিয়ে রয়েছেন কিনা তা বলতে পারছে না কেউ। তাই কোন কোন নেতারা এগিয়ে আর কারা পিছিয়ে তা খোদ দলের নেতারাও জানেন না। সেজন্য ছাত্রলীগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের কমিটি নিজ হাতে দেখছেন। তিনি যাদের ভাল মনে করবেন তাদেরকেই নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন।
বিগত ২৯তম সম্মেলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুটি পদের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩২৩টি। এবারও এমন পরিস্থিতি থাকার সম্ভাবনা থাকলেও এবার ‘ক্লিন ইমেজ’ থাকা সহ আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও দলের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে রাজনীতি করা ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উঠে এসেছে।
এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য। দেশব্যাপি ছাত্রসমাজে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন তূর্য।
কে এই ইয়াসির আরাফাত তূর্য—
স্থায়ী ঠিকানা শরীয়তপুর জেলার অন্তর্গত গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নস্থ হাজ্বী ছবর আলী কাজীর কান্দি গ্রামে। তার পরিবার বিএনপি শাসনামলে হামলা, মামলা ও নিপিড়নের শিকার। বিএনপি শাসনামলে তার পরিবারের কোন পুরুষ বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না হুলিয়ার ভয়ে।
২০০৩ সালে একাকি পেয়ে তার চাচা দিদারুল ইসলাম দিদা কাজীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রগ কেটে পঙ্গু করে দেয় বিএনপি জামায়াতিরা। ২০০৩ সালে তার দাদা, বর্তমান আলাওলপুর আওয়ামী লীগ এর প্রবীণ নেতা হাজ্বী ইদ্রিস আলী কাজীকে বৃদ্ধ বয়সে স্থানীয় বাজারে একা পেয়ে মেরেছে বিএনপির নেতারা।
তার দাদা রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিববাহিনীর অন্যতম সদস্য কাজী মো: সিরাজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা ও আলাওলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ইয়াসির আরাফাত তূর্যের বাবা শফিকুল ইসলাম কাজী (কাজী শফিক), গরীবের চর(আলাওলপুর) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আলাওলপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী যুবলীগের(১৯৯১ থেকে ২০০১) সাবেক সভাপতি, আলাওলপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ছোট কাকা, কাজী মো রাসেল আহমেদ আলাওলপুর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি; সেজো কাকা, কাজী মো: জাকির হোসেন, আলাওলপুর শাখা আওয়ামীলীগের ১ং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আলাওলপুর শাখা যুবলীগের সাবেক সভাপতি(২০০১ থেকে ২০১০) ও আলাওলপুর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি; বড় কাকা, কাজী মো: দিদারুল ইসলাম (দিদা কাজী) আলাওলপুর শাখা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তার মামাতো ভাই জগন্নাথ কলেজের সাবেক ছাত্র সরদার রাসেল আহমেদ বাবু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন।
ইয়াসির আরাফাত তূর্য পারিবারিক সূত্রে জন্ম থেকেই আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথে যুক্ত। ২০১৩ সালে ঢাকা নটর ডেম কলেজের ছাত্র থাকাকালীন শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল থেকেই তূর্যের সচেতন রাজনৈতিক জীবনের পথচলা শুরু।
২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদি হাসান মোল্লা ভাই ও মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিক সুজনের হাত ধরে তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পথচলা শুরু।
ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতৃত্ব সোহাগ-জাকির কমিটিতে ব্যাপক জামাত শিবির অনুপ্রবেশ ঘটলে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে দু:খপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মান ও ছাত্রলীগের মর্যাদা রক্ষায় আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগে কথিত সিন্ডিকেট বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির একজন কর্মী তূর্য।
যার কারণে হল কমিটিতে বঞ্চিত করা হয় তাকে। পরবর্তিতে সিন্ডিকেট বিরোধী আন্দোলন সফল করলে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ের সকল দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজ হাতে নিয়ে নেন।
তূর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চর্চা করে জ্ঞানভিত্তিক উত্তর আধুনিক যুগের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ভবিষ্যতে ছাত্রলীগে যাতে মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি হয় সে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা, লেখালেখিসহ সাহিত্য সংসদ ও প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম গঠনে ভূমিকা রেখেছেন ও বিভিন্ন সময়ে সৃজনশীল কর্মসূচী পালন করেছেন।
আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ২০১৪ সালে দেশব্যাপী বিএনপি জামাতের অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলায় ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে কর্মী হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তিতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পপুলিস্টস ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন’ শুরু হলে তুমুল প্রতিকূলতার মধ্যে তূর্য সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ কার্যক্রমে সক্রীয় ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনের অসাড়তা ও ষড়যন্ত্র নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করায় তূর্য ঢাবির বাংলা বিভাগের কতিপয় বিএনপি জামাতি শিক্ষকের রোশানলে পড়েন। তারা তাদের কোর্সে তূর্যকে কম নম্বর দিয়ে ফেইল করিয়ে দেয় যার ফলে তূর্যের ফলাফল কিছুটা খারাপ হয়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শরীয়তপুর ৩ সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আসনভিত্তিক সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পরবর্তিতে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগবিরোধী সকল অপচেষ্টা মোকাবিলায় রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ছাত্রলীগের জনপ্রিয় এই নেতা।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ডাকসু ভিপি নুরুর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় ২ মাস কারাভোগ করেন তূর্য। পরবর্তীতে আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে কারামুক্তি লাভ করেন নির্যাতিত এই ছাত্রনেতা।
+ There are no comments
Add yours