পরিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

Estimated read time 1 min read
Ad1

খবর ডেস্কঃ

ছেঁড়াদ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড। এটি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিরনের দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের অংশ হিসেবে পরিচিত। ছেঁড়াদ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় দ্বীপটির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবে যায়। পাথরে আছড়ে পড়া নীল ঢেউ এখানে মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা করে, ভরা পূর্ণিমায় যাদুকরী মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়।

প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ করে। সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা খাবার নিয়ে সেখানে যান। ফলে পলিথিনসহ বিভিন্ন কারণে ছেঁড়াদ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ বিপন্ন হয়। পরিবেশবাদীরা এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে।

দীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সরকার এ দ্বীপটিকে পরিবেশ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখাকার ব্যক্তিগত ভূমি সরকার ক্রয় করে নেয় একযুগেরও বেশি সময় পূর্বে।

তারপরও থেমে নেই পর্যটকের ভ্রমণ কিংবা পরিবেশ বিনষ্টের প্রক্রিয়া। দ্বীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ বাঁচাতে সম্প্রতি কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চেয়ে ১২ অক্টোবর উপসচিব ড. মোঃ মনসুর আলম স্বাক্ষরিত পরিপত্র জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ২২.০০.০০০০.০৭৪.৩১.০১৬.২০.১০২ স্মারকের পরিপত্রে সেন্টমার্টিন দ্বীপে সংগঠিত পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ কার্যক্রমসমূহ বন্ধ করার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরিপত্রে পরিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এসব কার্যক্রম বন্ধে কোস্টগার্ডকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।

চলতি নভেম্বর মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াতের সংখ্যা বাড়বে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরিপত্রটি জারি করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা এর পরিচালক সোলায়মান হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ অংশে এখনো কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। প্রবালগুলো সংরক্ষণের জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে সেন্টমার্টিনের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটর সাইকেল ও ইঞ্জিন চালিত গাড়ি চালানো যাবে না। রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না। রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চস্বরে গান-বাজনার আয়োজন করা যাবে না। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণ সামগ্রী সেন্টমার্টিনে নেয়া যাবে না। পরিবেশ দূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা হবে।

এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ডের সেন্টমার্টিন এরিয়া কমান্ডার লে. আরিফুজ্জামান রনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে কোস্টগার্ড কার্যক্রম শুরু করেছে। স্থানীয় জনগণ, জেলে বা কোন পর্যটক যাতে ছেঁড়াদ্বীপে না যেতে পারে তার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জেলে, অধিবাসী, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় ছেঁড়াদ্বীপের বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এ দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি উল্রেখ করেন।

পরিবেশবাদী সংগঠকরা বলছেন, দ্বীপটি পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের কারণে মারাত্মক ধ্বংসের মুখে রয়েছে। দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপের জীব-বৈচিত্র্য এবং বনভূমি মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। ফলে শুধু ছেঁড়াদ্বীপ নয়, সেন্টমার্টিনেই পর্যটকদের যাতায়াত আপাতত নিষিদ্ধকরা উচিত। পরিবেশ সংগঠক এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ জানান, ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ অনেক আগেই করা প্রয়োজন ছিল, দেরিতে হলেও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ায় এ দ্বীপ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours