মিরাজের অবিশ্বাস্য বীরত্বে বাংলাদেশের জয়

Estimated read time 1 min read
Ad1

১৮৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ১৩৬ রানেই ৯ উইকেট নেই বাংলাদেশের। উইকেটে ব্যাটার বলতে ১১ নম্বরে নামা মুস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরপুরের পরিপূর্ণ গ্যালারি তখন একদম নিশ্চুপ। জেতার আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলেন দর্শকেরা।

ম্যাচের এমন এক পরিস্থিতিতে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মিরাজ। খেলেন ৩৮ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। আর তাতে রোহিত-কোহলিদের হতাশায় ডুবিয়ে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

মেহেদী হাসান মিরাজ যে বিস্ময়কর ব্যাটিং করলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মোস্তাফিজুর রহমানকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রেখে সিঙ্গেল না নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে জয়ী করে মাঠ ছাড়ার মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন এবং একজন খেলোয়াড় যখন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এভাবে খেলতে পারে, তখন ভারতের মত দলেরও কিছু করার থাকে না।

মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ভারতের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মিরাজের বীরত্বে এক উইকেটে জিতেছে লিটন দাসের দল। অবিশ্বাস্য এই জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

৫০ ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যটা ছিল ১৮৭ রানের। ওয়ানডে ম্যাচের প্রেক্ষিতে এই রান তাড়াকে বেশ সহজই বলা চলে। কিন্তু সেই লক্ষ্যটাও পাহাড়সম মনে হল বাংলাদেশি মিডল অর্ডারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের কারণে।

৩৯ বল খেলে মিরাজের করা ৩৮ রানের ইনিংসটি শত সেঞ্চুরির চেয়েও মূল্যবান। যেখানে বাংলাদেশের হার প্রায় নিশ্চিত। শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ, দিপক চাহার, কুলদিপ সেন, শাহবাজ আহমেদ কিংবা ওয়াশিংটন সুন্দরদের দিয়ে একের পর বোলিং করে মিরাজ-মোস্তাফিজের উইকেট ভাঙার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে গেছেন রোহিত শর্মা।

শেষ দিকে যখন বোলাররা ব্যর্থ হচ্ছিলেন এবং মিরাজ ও মোস্তাফিজ একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন, তখন হতাশায় রোহিত শর্মার চেহারা হয়েছিলো দেখার মত। যেন কেঁদে ফেলবেন। বিরাট কোহলিকেও দেখা গেলো বেশ হতাশাগ্রস্থ। ১৮৬ রান করেও ম্যাচটিতে নিশ্চিত জয় পাচ্ছিলেন যখন, তখন এভাবে বাঁক বদলে গেলে কার মাথা ঠিক থাকে, বলুন!

মুশফিকুর রহিম যখন আউট হয়েছিলেন, তখন মাঠে নামেন মিরাজ। এরপর একে একে আফিফ হোসেন ধ্রুব, এবাদত হোসেন এবং হাসান মাহমুদকে আউট হতে দেখলেন। ১২৮ থেকে ১৩৬- এই ৮ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের পতন ঘটে। তখনও জয় থেকে ৫১ রান দুরে বাংলাদেশ।

অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও তখন দুঃস্বপ্নে বিশ্বাস করার কথা নয় যে, বাংলাদেশ জিতবে। ভারতীয় বোলার আর ফিল্ডাররা যেভাবে বাংলাদেশকে চেপে ধরেছে, তাতে জয় পাওয়া তো স্বপ্নেরই ব্যাপার টাইগারদের জন্য।

এমন পরিস্থিতিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন মিরাজ। মোস্তাফিজকে নন স্ট্রাইকপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে রেখে দেন শুধু উইকেটটা টিকিয়ে রাখার জন্য। মনে হচ্ছিল, এমন এক গর্তের কিনারায় দাঁড়িয়ে মিরাজ- যেন একটু টোকা লাগলেই পতন ঘটবে।

এমন অবস্থায় কুলদিপ সেনকে এক ওভারে দুটি ছক্কা মেরেই ম্যাচের গতি বদলে দেন। পিন পতন নিরব হয়ে যাওয়া মিরপুরের গ্যালারিতে প্রাণের সঞ্চার করেন। পরের ওভারে মোহাম্মদ সিরাজ ছিলেন বোলার। তাকে কোনো রান না নিয়েই কাটিয়ে দিলেন। শুধু চতুর্থ বলটিকে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করে নিয়েছিলেন। এছাড়া সিঙ্গেল-ডাবলসের সুযোগ পেলেও মিরাজ উইকেট থেকে নড়েননি।

৪৩তম ওভারেই শার্দুল ঠাকুরের একটি বলকে আকাশে তুলে দেন মিরাজ। ক্যাচটি ধরতে যান লোকেশ রাহুল। হাতে গ্লাভস। মিস হওয়ারই কথা নয়। ভাগ্য ভালো মিরাজের। বলটি তালুতে গেলো না। হাতের কব্জির অংশের দিকে আঘাত করে পড়ে গেলো মাটিতে। বেঁচে গেলেন মিরাজ। তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩২ রান।

এরপরের ওভারেই দিপক চাহারকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। মোট নিলেন ১৫ রান। পরের ওভারে শার্দুল ঠাকুরকে বাউন্ডারি মারেন মোস্তাফিজুরও। যেন ব্যাটিং করার নেশায় পেয়ে বসেছে তখন মিরাজ এবং মোস্তাফিজকে।

শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের ৮ রান। দিপক চাহারের কাছ থেকেই (৪৬তম ওভারে) ৮ রান নিয়ে নিলেন মিরাজ এবং মোস্তাফিজ। ৫১ রানের অবিশ্বাস্য এবং অবিচ্ছেদ্য এক জুটি গড়ে জিতিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। হাতে তখনও বাকি পুরোপুরি ৬টি ওভার (২৪ বল)।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours