ইসলামপুরে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

Estimated read time 1 min read
Ad1

ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির অহংকার ও গৌরবের মাস। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ইসলামপুরের মাটি পাকহানাদার মুক্ত হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের এদিন হাজার হাজার মুক্তিকামী ছাত্র জনতা আনন্দ উল্লাসের মধ্যে দিয়ে থানা চত্বরে জালাল কোম্পানির কমান্ডার প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্বাধীনতার প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনটি ইসলামপুরবাসীর জন্য অত্যন্ত আভিজাত্য ও গৌরবের।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন স্বাধীনসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, যখন এই মাস আসে তখনই মনটা ফিরে যায় অতীতের সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে। বিশাল জনসমুদ্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কণ্ঠে ঘোষিত হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

ওই সময় উপজেলার পৌর শহরের উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের কৃতি সন্তান কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে জয় বাংলা মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুজাহিদ সদস্য ও অন্যান্য লোকজনদের নিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জে স্থাপিত প্রাথমিক রিক্রুট মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করেন।

১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে বিভিন্ন শ্রেণী -পেশার লোকজনদের নিয়ে জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে কোম্পানির যোদ্ধাদের নিয়ে ইসলামপুর সিরাজাবাদ এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে মাদারী ছন আখ ক্ষেত নামক স্থানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয় ও সেখানে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ গেরিলা যুদ্ধ চালানো হয়। প্রতিদিন জালাল বাহিনী তার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে জালাল বাহিনী ইসলামপুরের পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখলের প্রস্তুতির উদ্দেশে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে পলবান্ধা ইউনিয়নের পশ্চিম বাহাদুরপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠ সংলগ্ন ইসলামপুর সিরাজাবাদ সড়কে অবস্থান নেয়।

মুক্তিযোদ্ধারা চার ভাগ হয়ে এক প্লাটুন থানা পরিষদের উত্তর পশ্চিম কোণে ঋষিপাড়া রেল ক্রসিং এলাকা, ২ নম্বর প্লাটুনকে সর্দার পাড়া অস্টমিটেক খেয়া ঘাট সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ পাড় ইসলামপুর-সিরাজাবাদ সড়ক এলাকায়, ৩ নম্বর প্লাটুনকে থানার পূর্ব পাশে পাকা মুড়ি মোড় বর্তমানে ইসলামপুর হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এবং ৪ নম্বর রিজার্ভ প্লাটুনকে পশ্চিম বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর পাশে অবস্থান নেয়।

ওইদিন দুপুর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ হয়। পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলিতে টিকতে না পেরে অস্ত্র গোলাবারুদ এবং অন্যান্য জিনিস পত্র ফেলে রণ ভঙ্গ দিয়ে বিশেষ ট্রেনে জামালপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় ঝিনাই ব্রিজসহ তিনটি রেল ব্রিজ ধ্বংস করে জামালপুর পর্যন্ত আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

অতঃপর ৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মজির উদ্দিন আহমেদ, গণি সরদার, টুআইসি আলাউ উদ্দিন জোরদার, প্লাটুন কমান্ডার শাহাদত হোসেন স্বাধীন ও হাজার মুক্তিকামী ছাত্র জনতা আনন্দ উল্লাসের মধ্যে দিয়ে থানা চত্বরে জালাল কোম্পানির কমান্ডার প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্বাধীনতার প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই সাথে ইসলামপুরের মাটি হানাদার মুক্ত হয়। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও উপজেলা প্রশাসন।

এ উপলক্ষে বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে, শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় বটতলা চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ তানভীর হাসান রুমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট এস.এম জামাল আবদুন নাছের বাবুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুস ছালাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মানিকুল ইসলাম মানিক ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল খালেদ আখন্দ প্রমুখ। আলোচনা সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিবস উপলক্ষে ছাত্র-জনতা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা রাজাকার আলবদরদের তালিকা প্রকাশ না করায় দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত এ তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানান।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours