ক্যানভাসে রংতুলির ছোঁয়ায় শিল্পের সুষমায় অনবদ্য সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন জয়নুল আবেদিন।
বাংলাদেশের অন্যতম নক্ষত্র শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বিখ্যাত এই বাঙালি চিত্রশিল্পী ক্যানভাসে রংতুলির ছোঁয়ায় শিল্পের সুষমায় অনবদ্য সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। যিনি জীবনের সংগ্রামী অধ্যায় স্পর্শ করেছেন তার সৃজনের ভুবনকে। যার চিত্রমালা, মই দেয়া, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি শিল্পকর্ম এখনো শিল্পানুরাগীদের পরানের গহীনে যেমন দাগ কাটে।
১৯১৪ সালের এই দিনে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা বর্তমান কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা, মা জয়নাবুন্নেছা ছিলেন গৃহিণী। ৯ ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়।
তার মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতবিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি চিত্রকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। শুরুতে এর ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক।
১৯৫১ সালে এই আর্ট ইন্সটিটিউট সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ সালে আর্ট ইন্সটিটিউটটি শাহবাগে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৩ সালে এটি একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর একই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’।
জয়নুল আবেদিন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত তার শিল্পকর্মের সংখ্যা ৮০৭টি। তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
শিল্পাচার্যের জন্মদিন উদযাপনে তিন দিনের জয়নুল মেলার আয়োজন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। জয়নুল সম্মাননা, শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ও লোকশিল্প মেলা দিয়ে সাজানো থাকবে তিনদিনের এই আয়োজন।
+ There are no comments
Add yours