২০২২ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭ হাজার ৬১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৭৫ জন।
আজ (২ জানুয়ারি) ‘২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মোজাম্মেল হক।
তিনি জানান, বছরব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৯টি। এসব দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত এবং ২০১ জন আহত হয়েছেন। আর নৌপথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত এবং ৩১৮ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি নিখোঁজ হয়েছেন ৭৪৩ জন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৭.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৮ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে গত ৮ বছরের মধ্যে ২০২২ সালে সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণহানিও এ বছর বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর ১৫ জুলাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর, ওইদিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২৯ জুলাই। ওইদিন ২৭টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনটি কিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো— সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, সড়ক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন করা, সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও বিধিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা ও জেব্রা ক্রসিং অংকন করা, গণপরিবহন চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা, সড়ক পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা, গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি।
+ There are no comments
Add yours