ডিসেম্বরে ভাসানচরে যাবে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত ৫শত রোহিঙ্গা পরিবার

Estimated read time 1 min read
Ad1

দেলোয়ার হোসাইন টিসু: উখিয়া,কক্সবাজার।

আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভাসানচরে যাবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত ৫ শ ‘ রােহিঙ্গা পরিবারের ১২ শ’র বেশী রােহিঙ্গা । মঙ্গলবার ( ২৪ নভেম্বর ) দুপুরে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে এক অভ্যন্তরীণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । তবে অনুষ্ঠিত সভার কথা স্বীকার করলেও ভাসানচরে রােহিঙ্গাদের পাঠানাে এবং ঠিক কতজন রােহিঙ্গা যাচ্ছে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাে : সামছু দৌজা ।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের একাধিক নির্ভরযােগ্য সূত্র জানিয়েছেন , প্রথম ধাপে প্রায় ৫০০ রােহিঙ্গা পরিবারকে ভাসানচরে নেবার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে শরণার্থী , ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় ( আরআরআরসি ) ।

এই ৫০০ রােহিঙ্গা পরিবারকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভাসানচরে নেওয়া হবে । মঙ্গলবার আরআরআরসি’র এক অভ্যন্তরীন সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় । এই ৫০০ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১২০০ এরও বেশি । আবহাওয়া জনিত কারণে ৩ ডিসেম্বর তারিখটি পরিবর্তন হলেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই রােহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হবে । একই সাথে ২৩ টি দেশি এনজিও রােহিঙ্গাদের সাথে ভাসানচরে যাচ্ছে । জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাে : সামছু দৌজা বলেন রােহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে আরআরআরসি ’ অফিস সবসময় প্রস্তুত ।

এটি ভাল খবর । কিন্তু , কখন , কিভাবে এবং কতজন রােহিঙ্গা ভাসানচরে যাবে সে তথ্য আমার কাছে নেই । তবে সরকারের নির্দেশে রােহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানে ‘ আরআরআরসি ‘ অফিস কাজ করে যাচ্ছে । বৈঠকের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে আরও বলেন , এটি আমাদের নিয়মিত বৈঠকের অংশ । সভায় অনেক কিছুই তাে আলােচনা হয় । যদি রােহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানাে হয় , তাহলে অবশ্যই সাংবাদিকদের জানানাে হবে ।

“ আরআরআরসি ‘ অফিসের এক নির্ভরযােগ্য সূত্র জানায় , ইতিমধ্যে রােহিঙ্গা নেতাদের একটিদল ভাসানচর ঘুরে এসেছেন । তাদের মধ্যে কোন কোন রােহিঙ্গা নেতাদের মতবিরােধ দেখা দিলেও বেশীরভাগ রােহিঙ্গা নেতা ও সাধারণ রােহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে প্রস্তুত । একারণে প্রথম ধাপে ৫ শ ’ পরিবারের ১২ শ’জনকে পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । শুরুতেই এসব রােহিঙ্গাদের দেখভাল করার জন্য ২৩ টি এনজিও ভাসানচরে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছে । এদিকে , নতুন রােহিঙ্গা পরিবারগুলােকে ভাসানচরে পাঠাতে মঙ্গলবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে ভাসানচরের জন্য ফুড ও নন ফুড আইটেম চাহিদাপত্রের নমুনা সংযােজিত হয়েছে ।

এরইমধ্যে বিভিন্ন এনজিও ভাসানচরে রােহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পর সম্ভাব্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্প ( ফুড ও নন ফুড ) জমা দেওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে । চলতি মাসের গত ১৬ নভেম্বর ২২ টি এনজিওর কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর ঘুরে এসে জানিয়েছিলেন , ভাসানচরে রােহিঙ্গাদের বসবাসের খুবই উপযােগী পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে । সেখানে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন এবং জীবিকাসহ দুর্যোগ মােকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে । কক্সবাজারে বর্তমানে যেভাবে রােহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে , তার চেয়ে অনেক ভালাে থাকবে ভাসানচরে । সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম ।

রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক ( ডিআইজি ) মাে . আনােয়ার হােসেন বলেছেন , ‘ ভাসানচরে নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখভাল করছে । ফলে সেখানে পুলিশের একটি ব্যাটালিয়ন নির্মাণ করা হবে । আরও নিরাপত্তা বাড়াতে দ্বীপ ঘুরে দেখে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলােচনা হয়েছে ।

২০১৫ সালে প্রথম ভাসানচরে শরণার্থীদের বসবাসের জন্য আবাসন গড়ার পরিকল্পনা করা হয় । সেসময় চরটিতে কোনও জনবসতি ছিল না । ২০১৭ সালের রাখাইনে রােহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধির পর মিয়ানমার থেকে সাত লাখেরও বেশি রােহিঙ্গা প্রাণভয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় পালিয়ে আসে । এরপর কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে ভাসানচরে অবকাঠামাে গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় ।

এরই অংশ হিসাবে রােহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার । জোয়ার ও জলােচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলােমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলােমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রােহিঙ্গা বসবাসের উপযােগী ১২০ টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামাে তৈরি করা হয়েছে । গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয় । বাড়তি টাকায় বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা , আনুষাঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে ।

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রােহিঙ্গা । এছাড়াও এর আগে এসে আশ্রয় নিয়েছিল বিপুল সংখ্যক রােহিঙ্গা । বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১১ লাখ । বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশের সহায়তায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্প নির্মাণ করে তাদের আশ্রয় দিলেও তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে ।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours