রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও ঘটনায় উপস্থিত না থেকে নিরব ভূমিকা পালন করার অভিযোগ এনে প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তার প্রতীকী জানাজা পড়েন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে কফিন বক্সকে প্রক্টর প্রতীকী সাজিয়ে এ জানাজার নামাজ পড়েন তারা। এসময় বিভিন্ন অভিযোগ টেনে মোনাজাতও করেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে কফিনের বাক্স এনে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারা গেছে লিখেছেন এবং প্রক্টরের জানাজার জন্য প্রতীকী লাশ বানিয়ে জানাজা পড়তেও দেখা যায়।
প্রতীকী জানাজার নামাজ শেষে সকল শিক্ষার্থী হাত তুলে মোনাজাত করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, আল্লাহ আমরা দু’হাত তুলে তোমার কাছে দোয়া করছি। কাল থেকেই আমাদের প্রক্টর আমাদের কাছে মারা গেছেন। রাব্বুল আলামিন আমরা খালি বাক্স সামনে নিয়ে হাত তুলেছি দোয়া শেষে যেন তাকে ভিতরে মৃত অবস্থায় পাই। আমাদের শিক্ষার্থী ভাইয়েরা যখন রক্তাক্ত অবস্থায় গড়াগড়ি করছে তখন প্রক্টর আমাদের কাছে না থেকে বাসায় পরিবার নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। আমাদের ছাত্ররা যার হাতে নিরাপদ নয় আমরা এমন প্রক্টর চাইনা আল্লাহ। এজন্য আমাদের কাছে আজ থেকে প্রক্টর মারা গেছে আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
জানাজার দোয়া শেষে প্রতীকী কফিন বক্স আগুনে ফেলে দেন তারা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে প্রায় ২ঘন্টা যাবত অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তার বাস ভবনে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
এদিন সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থী। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবরোধ করে আন্দোলন করেন।
উল্লেখ, বাসের ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়-শিক্ষার্থী ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বর্তমানে মহাসড়কের দুপাশ থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।
সংঘর্ষে আহত হয়ে প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ নামের এক ছাত্র। যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে বাস থেকে কাউন্টারে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ফারজানা খান সারথি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
+ There are no comments
Add yours