চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ‘চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগান -এ শুরু হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মযজ্ঞ। বর্তমানে এখানকার চা বাগানজুড়ে এখন কচি সবুজ রঙের ছোঁয়া। পাতায় পাতায় সবুজ সদ্য অঙ্কুরিত। প্রতিটি টিলা-সমতল প্রান্তরে সবুজের সমারোহ। সেই সতেজ আর স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে দু’টি পাতা একটি কুঁড়িরা এখন বাগানে বাগানে মাথা তুলে ঠায় দাঁড়িয়ে।
কিছুদিন আগে এই চা গাছের মাথা ছাঁটাই (প্রুনিং) করা হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতি বছর এভাবে চা গাছগুলোর মাথা নির্দিষ্ট মাপ অনুসারে ছেঁটে ফেলা হয়। তারপর চলে অপেক্ষার পালা। চা শ্রমিক এবং চা-বাগানের ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) এরা গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন এদিনটির জন্য। চা বাগানে কখন কুঁড়িরা চোখ মেলে তাকাবে। কখন সবুজে সবুজে ভরে যাবে, দৃষ্টিজুড়ানো মহনীয় সৌন্দর্যের হাতছানি দিবে সে প্রতীক্ষায় থাকেন চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী দেশের ১৬৭টি বাগানের মধ্যে গুনে মানে ৫ম স্থানে ছিল চির সবুজে সবুজাভ ‘চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগান’।
জানা যায়, মধুপুর চা বাগান, খৈয়াছড়া চা বাগান, ক্লিফটন চা বাগান ও কর্ণফুলী চা বাগানের পরেই মানের দিক থেকে এখানের উৎপাদিত চায়ের যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ, তেমনি এ বাগানের উৎপাদিত চায়ের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। ২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী দেশের ২০তম স্থানে আছে এ চা-বাগানটি। গত ২০২০ অর্থবছরে কাটিং, পাতার কোয়ালিটি, গুণগতমানসহ ভালো দামের জন্য চট্টগ্রামে বাগানটির অবস্থান ৩য় স্থানে ছিল। শীতের উত্তরী হাওয়ার শেষে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তায় বর্তমানে চা বাগানে কচিপাতা গজে উঠতে শুরু করছে।
বাঁশখালীর সর্ব উত্তরে পুকুরিয়া ইউনিয়নের উঁচু নিচু পাহাড়ি এলাকায় ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই চা বাগানটিতে রয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, উঁচু-নিচু ও ঢালু পাহাড়ে নারী-পুরুষ চা শ্রমিকরা চা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ গাছের বীজতলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে বাঁশখালী টি কোম্পানির সমুদয় শেয়ার ক্রয় করে ব্র্যাক। ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড নামকরণ করা হয়। ব্র্যাক চা বাগানটির মালিকানাস্বত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৪ সালে চা কারখানা চালু করে। অতঃপর চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের মালিকানা ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড’র নিকট থেকে গত ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর থেকে সিটি গ্রুপ পরিচালিত ফজলুর রহমানের ভ্যান ওমেরান ট্যাংক টার্মিনাল (বাংলাদেশ) লি. এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল মিলস লি. ক্রয় করেন।
চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের ম্যানেজার মো. আবুল বাশার দৈনিক অধিকারকে বলেন, “বাঁশখালীর চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে চা উৎপাদন বাড়ানোসহ ক্লোন চায়ের দিক দিয়ে দেশের সেরা চা বাগানে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। চা বাগানের উন্নয়ন হলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং স্থানীয় জনগণ নানাভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এই চা বাগানের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে ৭শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই বাগানের চা পাতার সুখ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। এ কারণে দেশের যত চা বাগান রয়েছে, বাঁশখালীর চা বাগানের পাতা মানের দিক দিয়ে অন্যতম। এই মানের জন্য চা বাগানের কর্মরতরা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। বর্তমানে চা পাতার বিক্রির অর্থ থেকে সরকার ভ্যাট পান। ডিসেম্বরে মৌসুম শেষে চা গাছ ছাটাই অর্থাৎ প্রুনিং এর পর নিয়মানুযায়ী ২ মাস ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে। বৃষ্টির পর নতুন কুঁড়ি গজালে শুরু হয় পাতা চয়ন এবং উৎপাদন। তবে ২০২১ অর্থ বছরে অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে প্রতিদিন কর্মকর্তাসহ ৭ শতাধিক শ্রমিক এ চা বাগানে তাদের শ্রমের মাধ্যমে নতুন পাতা উৎপাদন, ট্রেসিং থেকে শুরু করে সামগ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশখালীর চা সারা দেশে মানের দিক দিয়ে সু-খ্যাতি অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে চা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কেজি। আগের লক্ষ্যমাত্রা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ২০২১ অর্থবছরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে নতুন করে আরও প্রায় ৩ লক্ষ নতুন চারা রোপণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
+ There are no comments
Add yours