জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের নেয়া উচ্চবিলাষী চার মেগাপ্রকল্প নগরবাসীর ভোগান্তি দুর করতে পারে নি। মেগা প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক।
কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর ৩৬টি খাল খনন, সংস্কারের কাজ শেষ হয় নি পাঁচ বছরেও। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম নগরীর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু মুরাদপুর মোড়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘসময় ধরে চলমান কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে মুরাদপুরের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ সাদি সাইমন।
আজ (২০ এপ্রিল) দুপুর ১ ঘটিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে মুরাদপুর মোড়ের গুরুত্ব ও সেনাবাহিনীর কাজের ধীরগতি তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে লেখা হয়: ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, আসসালামু আলাইকুম। খোদা তা’য়ালার অশেষ কৃপায় আশা করি আপনি সুস্থ এবং ভালো আছেন। আমাদের প্রিয় শহর চট্টগ্রাম,বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং অভিজাত শহর বললেও দ্বিধা হবে না।এই চট্টগ্রামের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় যেমন বেশি তেমন এর গুরুত্ব রক্ষারও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আমাদের কিছুরই অভাব নেই,যথেষ্ট ট্রেন,প্লেন,বাস,জাহাজ,সুযোগ-সুবিধা একদম হৈ-হুল্লোড় বাজেট। কিন্তু অনেক বছর ধরে চট্টগ্রামের কোনো স্থানীয় অভিভাবক নেই। পিতা হারিয়েছে সে বহু আগেই কিন্তু পিতা হারানোর দুঃখ সে পাচ্ছে এখন।’
চট্টগ্রাম হতে যেখানেই যেতে হবে আপনাকে মুরাদপুরের উপর দিয়েই যেতে হবে।সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক দিন ধরে কাজ চলছে কিন্তু বুঝতে পারছি না কেন সেনাবাহিনীর উপর “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” এই প্রবাদ আছড় কেটেছে। সেনাবাহিনীও অনেক দিন ধরে আস্তে ধীরে কাজ করছে।
‘চট্টগ্রাম মানেই এখন যানজট,সংস্কারের নামে ভেঙে রাখা রাস্তাঘাট,ময়লা আবর্জনা আর সব প্রশাসক।সবখানেই শুধু প্রশাসক,হয় সে চায়ের দোকানে হোক কিংবা সরকারি অফিসে। যার কারণে মাঠকর্মীর বড়ই অভাব। চট্টগ্রামের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মুরাদপুর মোড়।চট্টগ্রাম হতে যেখানেই যেতে হবে আপনাকে মুরাদপুরের উপর দিয়েই যেতে হবে।সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক দিন ধরে কাজ চলছে কিন্তু বুঝতে পারছি না কেন সেনাবাহিনীর উপর “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” এই প্রবাদ আছড় কেটেছে। সেনাবাহিনীও অনেক দিন ধরে আস্তে ধীরে কাজ করছে। কাজেই,সেনাবাহিনী মুরাদপুর মোড়ে নালা কাটতে রাস্তা যে বন্ধ করেছে সে আজ অনেক দিন।মেইন রোড বাদে মুরাদপুর মোড় দিয়ে রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি মহাসড়কে উঠার আরেকটি সড়ক আছে যা শিক্ষাবোর্ডের পাশ দিয়ে পিলখানা এলাকা দিয়ে। সে রাস্তাতেও কাজ করছে বার্ধক্যে বৃদ্ধা রেলওয়ে।যার কারণে রাস্তাটি বন্ধ।’
‘অথচ,একটা প্রশাসক প্রাণী একবার চিন্তা করলো না এই যে এত দুর্ভোগ হচ্ছে মানুষের,এত কষ্ট হচ্ছে মানুষের একবার গিয়ে একটু দাঁড়িয়ে দেখি,কথা বলি। আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারব,এই এলাকায় কোনো ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে রাস্তাতেয় মৃত্যু বরণ করবে। আর চট্টগ্রাম শহরের নালার কাজ করতে গিয়ে বড় নালার পানিগুলো ছোট নালার মাধ্যমে গিয়ে যে রাস্তা ঘাট নোংরা করে রাখছে সেদিকে নজর নেই মহোদয়গণের। তাদের কিই বা যায় আসে, এসি রুম,হাইব্রিড প্রাডো গাড়ি,পুলিশ প্রটোকল,হাইড্রলিক হর্ণ এসব তো আছেই। আর শুধু শেয়ারগুলো আসলেই হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,যেহেতু আমাদের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিগণের অতিব্যস্ততার কারণে তারা এই বিষয়টি দেখতে পারছেন না তাই আমরা আপনার নিকট হাজির হয়েছি।আপনার একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি মায়ের মতই সুন্দর।আমরা আপনার প্রতি আস্থা রেখে গেলাম।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় অনুষ্ঠিত এক সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বার্থে খাল ও নালার ভেতর থাকা অস্থায়ী বাঁধগুলো চলতি মাসের মধ্যে অপসারণ করা হবে। আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়া খালগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া সিডিএর প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন জলকপাঁগুলোরও (স্লুইসগেট) রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন।
এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নিজে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও জলাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা এলেই বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের জনগণকে তাই জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী যে মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেন, যা চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। মূলত চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ ও নকশার জটিলতা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সহসা জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে সহসাই মুক্তি পাবার সম্ভাবনা নেই। উল্টো বেড়েছে যোগাযোগের দুর্ভোগ।
বর্ষাকাল ঘনিয়ে আসায় শুধু মুরাদপুর নয়, নগরীর স্পর্শকাতর আগ্রাবাদ, ২নং গেইট, বহদ্দারহাট, চকবাজার এবং চাকতাই এলাকার অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা এখন চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি।
আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে খালগুলোর ভেতরে থাকা অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বৃষ্টির সময় পানি দ্রুত নামতে পারবে। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই নগরবাসী মুক্তি পাবে এই সমস্যা থেকে।
তিন বছর মেয়াদের উচ্চ বিলাসী এই প্রকল্পে ত্রুটিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই, তহবিল বণ্টনে ধীর গতি, দক্ষ জনবলের অভাব, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী, ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারনে সাড়ে চার বছর সময় অতিক্রান্ত হবার পরও জটিলতা কাটেনি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
+ There are no comments
Add yours