কোভিডমুক্ত ‘গরিবের ডাক্তার’

Ad1

চিকিৎসক সামির হোসেনচিকিৎসক সামির হোসেনরাত-দিন মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেন। কেউ আসেন তাঁর চেম্বারে, কেউ নেন টেলিমেডিসিন। সারা দিন রোগীর সেবায় মগ্ন থাকেন তিনি। কোনো ক্লান্তি নেই তাঁর। কর্মব্যস্ত দিন শেষে সবাই যখন ঘরে ফেরেন, তখন তিনি মধ্যরাতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে চায়ের দোকানে বসে ভাসমান শ্রমজীবী মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেন। বগুড়ার মানুষের কাছে ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবেই পরিচিত এই চিকিৎসকের নাম সামির হোসেন।

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকেই মানুষকে রক্ষায় তৎপর তিনি। কখনো মানুষকে ঘরে থাকার জন্য সচেতন করতে রাস্তায় প্রচারপত্র বিলি করেছেন, কখনো স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক বিলি করেছেন। আবার লকডাউনের দিনগুলোয় কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কখনো খাবার, কখনো মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। সংক্রমণ বেড়ে গেলে করোনা শনাক্তে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এলাকায় এলাকায় নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করেছেন। একঝাঁক তরুণ চিকিৎসককে নিয়ে ‘হটলাইন’ খুলে কোভিড চিকিৎসায় টেলিমেডিসিন সেবা দিয়েছেন। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন। আবার চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সংগ্রহ করেছেন।

করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে সামনের সারিতে থেকে লড়েছেন সামির হোসেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোভিড তাঁকেও ছাড়েনি। গত ২৪ জুন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় করোনা ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। সঙ্গে কোভিড পজিটিভ তাঁর বৃদ্ধা মা। একই হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ডে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে মা ও ছেলেকে। বয়স বেশি হওয়ায় মায়ের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই শ্বাসকষ্ট ও কাশির সঙ্গে রক্ত আসা শুরু হয়। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থেকে ১৬ দিনের মাথায় কোভিডকে জয় করেছেন গরিবের ডাক্তার।

গতকাল বৃহষ্পতিবার কোভিডের জীবাণুমুক্ত হয়েছেন সামির হোসেন। দ্বিতীয় দফা নমুনা পরীক্ষায় তাঁর বৃদ্ধা মাও করোনামুক্ত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় সামির হোসেন নিজেই হাসপাতালের বিছানা থেকে মুঠোফোনে কোভিড জয় করার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বগুড়াকে কোভিডমুক্ত করতে শিগগিরই আবার মাঠে নামবেন তিনি। নমুনা সংগ্রহ ও টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরে রাখতে শহরের মহল্লায় মহল্লায় ‘কোভিড প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করবেন।

বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতিও। দীর্ঘ সময় ধরে বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় মধ্যরাতে বিনা পয়সায় ভাসমান ছিন্নমূল মানুষ ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours