আটককৃত ১৫ মণ স্বর্ণ নিয়ে বিপাকে কাস্টম’স কর্তৃপক্ষ

Estimated read time 1 min read
Ad1

এস এম সালাহউদ্দিন, বিশেষ সংবাদদাতা:

ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কোষাগারে জমা থাকা ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ মণ স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছে ঢাকা কাস্টম হাউস। এসব স্বর্ণ বিভিন্ন সময় জব্দ করে শুল্ক বিভাগ। বছরের পর বছর এসব স্বর্ণ জমা হয় বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক পণ্যাগারে। এখন এ স্বর্ণ কাস্টম’স কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কাস্টম হাউসে পরিত্যক্ত অবস্থায় আটক ও জব্দ করা এসব স্বর্ণবার সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক জমা নেয়। কিন্তু ব্যক্তি ও যাত্রীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কার জব্দের পর ফৌজদারি মামলা করা হলে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক জমা নিচ্ছে না।

ব্যাংকের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে জমাকরণ পদ্ধতি নির্দিষ্টকরণ ও ট্রেজারি রুলস’ অনুযায়ী অন্য সংস্থার শুধু পরিত্যক্ত মূল্যবান ধাতু, মুদ্রা জমা নিয়ে থাকে। এ নিয়মের কারণে ফৌজদারি মামলায় জব্দ করা ১৫ মণ স্বর্ণ রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে নেওয়া হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে জমাকরণ পদ্ধতি নির্দিষ্টকরণ ও ট্রেজারি রুলস’ সংশোধনের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে সুপারিশমালা প্রণয়নে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, পরিত্যক্ত বা মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করা স্বর্ণালঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থায়ীভাবে জমা হয়। পরে সেসব স্বর্ণ নিলামে বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময় কাস্টমস এলাকায় ব্যক্তি ও বিদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কার জব্দের ঘটনায় করা মামলা তদন্ত ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা হয়। এতে ফৌজদারি মামলার বিচারকালে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বর্ণের নমুনা সংগ্রহ করে আদালতে দাখিল করে আবার আদালতের কার্যক্রম শেষে এ নমুনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এই সময়ে স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কারে নয়ছয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ফৌজদারি মামলার কারণে জব্দ করা স্বর্ণালঙ্কার ২০১৮ সাল থেকে গ্রহণ করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপদ ভল্টে গচ্ছিত সোনা নিয়ে গরমিলের অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে জব্দ সোনা জমা নিতে নতুন শর্তারোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নতুন নিয়মে সোনা জমা দিতে রাজি নয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর এ রকম একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তখন জমা করা সোনা রসিদের সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনায় বেশকিছু গরমিল খুঁজে পায় নিরীক্ষক দল। যা প্রতিবেদন আকারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০ থেকে ২৪ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণবারের অধিকাংশেরই ক্যারেটে গরমিল রয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০ থেকে ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে গচ্ছিত রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিরীক্ষক দল দেখতে পায় সেগুলো ১৮ ক্যারেট হয়ে গেছে।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করে বলা হয়, উচ্চ ক্যারেটের স্বর্ণ সরিয়ে সেখানে নিম্ন ক্যারেটের স্বর্ণ গচ্ছিত রাখা হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হয় প্রতিবেদনে। যদিও পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দাবি ছিল, ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ ঠিক আছে।

নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমস, বিজিবি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে আটক করা সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। সোনা জমা রাখার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষজ্ঞ দিয়ে ওইসব সোনার মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জমা রাখে।

পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমাকৃত সোনার পরিমাণ ও মান উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক রসিদ দেয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোয়ও এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মান নির্ধারণে ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট সব উপস্থিত থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব সোনা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours