পায়ে চালিত রিক্সার সেই টুং টাং শব্দ এখন আর তেমন শোনা যায় না। ব্যাটারি চালিত তিন চাকার রিক্সার দখলে এখন তাদের রাজত্ব। বছর তিনেক আগেও যেই পায়ে চালিত রিকশা ছিল মানুষের অন্যতম বাহন তা এখন শুধুই স্মৃতি।
সময় বাঁচাতে ও সাশ্রয়ী হওয়ায় অটো রিক্সা ব্যবহারে ঝুঁকছে যাত্রীরা। মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়া কম শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা দিনমজুর এর কাজ করা লোকেরা এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত রিক্সার চালক।
এছাড়াও সম্প্রতি বিদেশ ফেরত প্রবাসীদেরও দেখা যাচ্ছে এই পেশায়। কারো কারো মতে অলস মানুষের পছন্দের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিক্সাই বেশি পছন্দ। বর্তমান সময়ে বাঁশখালীর চানপুর, গুনাগরি,জলদি, চাম্বল ও উপজেলা সহো জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পায়ে চালিত রিক্সা প্রায়ই চোখে পড়েনা যায় না, তবে উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে হাতে গোনা একটা দু’টা পায়ে চালিত রিক্সা দেখা যায়।
বাঁশখালীতে যে সকল পায়ে চালিত রিক্সা চলাচল করতে দেখা যায় তার অধিকাংশ চালকই বয়স্ক। তাদের পেশি শক্তি দিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেন না যাত্রীদের। নূর হোসেন (৬৫)বলেন ” আঁই ৩৫ বছর ধরি এই রিক্সা চালাই,বুড়া বয়সত অটোরিকশা কিনিবার টিঁয়া হডে পাইয়ুম? এই রিক্সা চালাই দিনে একশো-দুইশো টিঁয়া পাই, হনোরহম সংসার চালাই’।
রমিজ মিয়া(৫৬) বলেন, “অটোরিকশার হারনে আঁর রিক্সাত এহন যাত্রী হম চড়ে তাই ইনকাম ও হম, বউ বাইচ্চা লই বউত হষ্টত আছি’। গুনাগরি সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমির বলেন,” কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় বলে ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে যার দরুন বলা চলে পায়ে চালিত রিক্সা বিলুপ্ত প্রায়’।
তবে এই অটোরিকশার আধিক্যতাও গুনাগরী সহো বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যানযটের অন্যতম কারন বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য :-২০১৭ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধের নির্দেশ দিলেও এখনো বাঁশখালী সহ দেশের সর্বত্র ব্যাটারি চালিত রিক্সায় সয়লাব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের যন্ত্রের প্রতি নির্ভরতা বাড়লেও ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার আধিক্যতা জনজীবনে জটিলতা সৃষ্টি করছে।
বেপরোয়া গতি, এল ইডি লাইটের তীব্রতা, শিশু-কিশোর কিংবা অদক্ষ চালকের দ্বারা পরিচালিত এই যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়, দুর্ঘটনার শিকার অনেকে বরণ করে পঙ্গুত্ব। এছাড়াও ব্যাটারিচালিত হওয়ায় চার্জিং এর জন্য প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে বিদ্যুৎ বাড়ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ফলে পাল্লাদিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং এর পরিমাণ।
নয়ন নাথ(৩০) নামে এক (এন জি ও) কর্মকর্তা জানান,” অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতি ও গাড়ি চালানোর সঠিক নিয়ম না জানার কারনে আমরা যারা বাইক নিয়ে যাতায়াত করি তারা প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ি এবং হতাহতের শিকার হই”।
তবে নুরুল হুদা(৩৫) নামে এক মোটর রিক্সা চালক জানান, করোনাকালীন সময়ে চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন, পরবর্তীতে লোন করে একটি রিক্সা ক্রয় করে নিজেই তা চালিয়ে পরিবারের খরচ সামলান, এখনও কোন ভাবে রিক্সা চালিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এখন হঠাৎ করে এই পেশা বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকবে। বিকল্প কোন আয়ের উৎস তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তার চলমান পেশা বন্ধ করার নির্দেশ না দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ জানান।
মো রিয়াদ, বাঁশখালী
+ There are no comments
Add yours