১৩২ টি দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রায় দিয়েছেন-পররাষ্ট্র মন্ত্রী

Estimated read time 1 min read
Ad1

খবর বাংলা ডেস্ক

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সাথে বিশ্বের ১৩২ টি দেশ রায় দিয়েছেন। মায়ানমারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবেন বলে কথাও দিয়েছে। কিন্ত সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে একজন রোহিঙ্গাও মায়ানমার ফিরিয়ে নেয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম লিখিত রোহিঙ্গা- নিঃসঙ্গ নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠি এবং খড়িমাটি-শেষ শীমান্তের পর কোথায় যাব আমরা এ দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান । বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ সবদেশে গেছি। সবাই স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। তাই সমস্যা নির্মূলও করবে তারা। সবাই বলেছে, স্থায়ী সমাধান হলো লোকগুলো ফিরিয়ে নেওয়া। সুতরাং সেইদিন থেকে এখনও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ড্রাইভার সিটে আছে। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন- সবাই একবাক্যে বলছে মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, দুনিয়ার কোথাও ১১ লাখ মানুষকে জায়গা দেওয়ার ইতিহাস নেই। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকের ১০ লাখ বাস্তুহারা মানুষ ইউরোপের ২৭টি দেশে জায়গা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। আর এখানে ১১ লাখ মানুষকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দিয়েছেন।
প্রথমদিকে বিদেশিরা কেউ সাহায্য করেনি। এখনকার লোকজন তাদের ঠাঁই দিয়েছেন, খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমরা এটি নতুন আদর্শ সৃষ্টি করেছি। বাঙালিরা মানুষ, তারা মানুষকে মানবিকতার চোখে দেখে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বারবার বলছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে ভেরিফেকশন করার পর। তারা কখনও বলেনি, রোহিঙ্গাদের নেবে না। আমরা বলেছি, তাদের নিয়ে যাও তবে নিরাপত্তার সাথে। তারা অঙ্গীকার করেছে নিয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও আজ প্রায় সাড়ে ৩ বছরে একটি রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। কারণ তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব।

তিনি বলেন, গত বছরের ২০ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে বড় মিটিং হয়। এরপর কোভিড ও নির্বাচনের বাহানা দিয়ে তারা আর মিটিং করেনি। আমরা আশা করছি, নতুন করে তাদের সঙ্গে বসবো। আজকে মিয়ানমারের সঙ্গে মিটিং চলছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে দেখেছি, তখন অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল আবার নিয়েও গেছে। ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা দেশে আসে। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে তারা ২ লাখ ৩০ হাজারকে নিয়ে যায় বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ইতিহাস আছে তারা নিয়ে গেছে। সেজন্য আমরা আশাবাদী বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু কখন নিয়ে যাবে, তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব নিয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক আলোচনা চালাচ্ছি।

তাদের বলেছি, দেখো তোমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তোমাদের উন্নয়নের যদি প্রত্যাশা থাকে তাহলে এ লোকগুলো নিয়ে যাও। যদি না নিয়ে যাও, তাহলে এই এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি হবে। অশান্তি দেখা দিলে, তোমাদের উন্নয়ন ব্যাহত হবে আমাদেরও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। মোমেন বলেন, আমরা চীনের সঙ্গে বসেছি, চারটি মিটিং করেছি। শেষ মিটিংটা খুব পজেটিভ ছিল। তখন তারা ওয়াদা করেছিল, রোহিঙ্গাদের তারা বোঝাবে। তাদের দেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অন্য সময় কিন্তু বলতো না।

রোহিঙ্গা না যাওয়ার কারণ তারা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রোহিঙ্গাগুলো যায় না কেন? দুইবার চেষ্টার পরও যায়নি। একটি বড় কারণ রোহিঙ্গারা তাদের সরকারকে বিশ্বাস করে না। তাদের বলেছি, তোমাদের কাছে বিশ্বাসের অপূর্ণতা রয়েছে। বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমরা তিন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছি। একটি বলেছি, তোমাদের সরকারের নেতারা এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলুক। তারা একবার এসেছিল, পরে প্রশ্নের মুখে পড়ে আর আসেনি।

তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি, রোহিঙ্গা মাঝিদের নিয়ে পরিদর্শন করাও। তারা কিন্তু কোনো উত্তর দেয়নি। তোমাদের সরকারকে যেহেতু বিশ্বাস করে না, তাই তোমরা নন মিলিটারিস সিভিলিয়ানকে রাখাইনে রাখো। তাতে, আমরা বলবো সেখানে তৃতীয় পক্ষ আছে তোমরা যাও কোনো অসুবিধা হবে না। তারা সেটিও মানেনি। হ্যাঁ বা না কোনোটি বলেনি।

কৌশলগত কারণে প্রতিবেশী দেশ আমাদের পক্ষে থাকেনি উল্লেখ করে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক ফোরামেও নিয়ে গেছি। ১৩২টি দেশ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্যে এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

মহামারিতে কেউ না খেয়ে মরেনি উল্লেখ করে মোমেন বলেন, শুধু দেশে নয় বিদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারাও যাতে না খেয়ে না মরে, সেদিকে খেয়াল রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছি, বিদেশে যারা আছেন তারা যাতে ভালো থাকেন। বন্ধু রাষ্ট্রকে বেশ দেন-দরবার করে বলেছি, এই প্রবাসীরা তোমাদের উন্নয়নের সহায়ক। এ আপদকালে তোমরা আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড তখনই যখন আমার একটি নাগরিকও তোমার দেশে না খেয়ে মরবে না।

একাধিক রাষ্ট্র তখন কথা দিয়েছে, বৈধ-অবৈধ সবাইকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কারণে। তিনি আমাদের অবস্থান এতো উঁচুতে নিয়ে গেছেন যা কেহই না করতে পারেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours