
আজ ২৬ আগস্ট, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি না করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলিতে আমিন, সালেকিন ও তরিকুল নামে তিন যুবক নিহত হন। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।
ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে করা ছয় দফা চুক্তি। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে দিনযাপন করছেন নিহতদের পরিবার। আজও কান্না থামেনি তাদের। সেই থেকে আজকের দিনটিকে স্থানীয়ভাবে শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আজকের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল থেকেই ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে থাকে।
দুপুর ২টার দিকে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নিমতলা মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে প্রথমে পুলিশ বাধা দেয়।
পুলিশের বাধা পেয়ে বিশাল মিছিলটি ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। পুলিশ-বিডিআরের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি আগাতে থাকলে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলি করা হয়।
ঘটনাস্থলে নিহত হন সুজাপুর চাঁদপাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম (২০), বারকোনা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আমিন (১৫) ও উত্তর সাহাবাজপুর গ্রামের সালেকিন (১৭)।
একই ঘটনায় দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র, রতনপুর গ্রামের শ্রীমান বাস্কে, সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়সহ আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। এরপর ফুলবাড়ীবাসী ধর্মঘটের মাধ্যমে এলাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করে।
এরপর ফুলবাড়ীর মানুষ গণআন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে বাস, ট্রেন চলাচলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সারাদেশের সঙ্গে কয়েকদিন ফুলবাড়ীর যোগাযোগ বিছিন্ন থাকে।
ফুলবাড়ীর মানুষের গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রতিনিধি দল ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে একটি বৈঠক করে ৬ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ১৫ বছর পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি সে চুক্তি। সেই দিনের কথা মনে হলে আজও তাদের বুক ভয়ে কেঁপে উঠে। তারা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি চায় না। তারা ৬ দফা দাবির বাস্তবায়ন চায়।
দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য ফুলবাড়ীর বিভিন্ন অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসী সম্মিলিতভাবে এবং তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কালো ব্যাজ ধারণ, গণজমায়েত, শোক র্যালি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান, মিলাদ মাহফিল ও প্রার্থনা।
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
                        
                
                                    
                                    
                                    
                            
                            
                            
                                                        
                                
                        
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
+ There are no comments
Add yours