আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বিষয়টি মূল্যায়ন করতে গত শনিবার ঢাকায় আসে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন এই দলটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে ঢাকায় এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ফান্ড (জনগণের করের টাকা) ব্যয় করে কোনো টিমকে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পাঠানোর মানেই হলো এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সে দেশের সরকার। বিশেষ করে ’৯০-এর দশকে পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আগে এ ধরনের টিমগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা দিয়েছিল।
এখন ঢাকা সফররত দলটি মূলত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ যে অচলাবস্থা তার কারণ ও গভীরতা কতটা। এর বাইরেও বিশ্লেষকরা যেসব মার্কিন এ দলটির ঢাকা সফরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাদের মতে, গত প্রায় দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র নিয়ে দুটো সম্মেলনের আয়োজন করেছে কিন্তু বাংলাদেশকে তাতে আমন্ত্রণ করা হয়নি। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের ভিসানীতি ‘বিশেষ কোনো পেশা ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নয়’—সবার জন্য প্রযোজ্য। যারাই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে তার যে কারও ওপর আরোপ করা হতে পারে’।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়-
মার্কিন এই মিশনটি প্রথমে বৈঠক করেন ক্ষমতায় থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বৈঠকের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিরোধী বিএনপি যে দাবি করছে সেটিকে তারা সংবিধানসম্মত মনে করেন না।
মার্কিন দলটি নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা ও আপসের কোনো উপায় আছে কিনা জানতে চেয়েছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমঝোতার পথ বিএনপিই বন্ধ করে দিয়েছে। আর সংবিধান লঙ্ঘন করে কোনো সমঝোতায় আওয়ামী লীগ আগ্রহী নয়।
তবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মার্কিন দলটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রতিটি বিষয় এবং বিরোধী দলের দাবিগুলোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে দলটির নেতারা মার্কিন দলটিকে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগই নেই বলে মনে করেন তারা।
বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারা নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
এ ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধাগুলো কী কী হতে পারে– এমন প্রশ্নও মার্কিন দলটি জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে করেছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ ও তপশিলের সময়সীমাসহ পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কেই জানতে চেয়েছিল মার্কিন দলটি।
পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও নির্বাচনী বিধিবিধান সম্পর্কে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন তারা।
আউয়াল আরও বলেন, ওরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভূমিকা, দায়িত্ব এবং কার্যক্রমসহ অনেক কিছু জানতে চেয়েছে। আমরা সবকিছু তাদের সামনে তুলে ধরেছি। তারা যা যা জানতে চেয়েছিল, আমরা জানিয়েছি। এখন তারা কী করবে, তা আমরা জানি না। হয়তো তারা দেশে ফিরে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে- নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কী পাঠাবে না। অথবা পাঠালে কীভাবে পাঠাবে।
এর বাইরে সিভিল সোসাইটি, নারী প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনার সময় মূলত নির্বাচনে সহিংসতার সম্ভাবনা কতটা, সবার জন্য সঠিক পরিবেশ আছে কিনা- মূলত এগুলোই ছিল মার্কিন দলটির মূল জিজ্ঞাসা।
যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত আইআরআই আর এনডিআই’র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বুধবার ঢাকায় সচিবালয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মার্কিন দল তার কাছে কিছু বিষয় জানতে চেয়েছে যে- সরকার ঠিকমতো নির্বাচন করতে পারবে কিনা ও সেই সক্ষমতা আছে কিনা। আর বিরোধী দল নির্বাচনে আসলে ঠিকমতো প্রচারের সুযোগ পাবে কিনা।
তারা জানতে চেয়েছে- প্রার্থীরা নিরাপত্তাহীন বোধ করলে কিংবা কোনো দল যদি মনে করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে তখন সরকার কি করবে? জবাবে আমরা বলেছি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা আগে হতো, এখন আর এগুলো হয় না। আর আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সুন্দর নির্বাচনের জন্য তৈরি হয়ে আছে। তপশিল ঘোষণার পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে তারা, সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বলছিলেন তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পূর্ব-পরিস্থিতি যাচাই করতে মার্কিন এই দলটি ঢাকায় এসেছে গত ৭ অক্টোবর। এ দলটি আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে। সফরের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলন বা একটি লিখিত বিবৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
+ There are no comments
Add yours