দেশের ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে উন্নয়নে প্রধান বাধা হিসেবে দেখেন। আর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে দায়ী করেছেন ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
‘দেশ হোক তেমন যুবকরা চায় যেমন’ -এই শিরোনামে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় যুব সম্মেলন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসে পাঁচ হাজার ৭৫ জন তরুণ (১৮-৩৫) অনলাইন জরিপে অংশ নেন। এছাড়া ২৮ তরুণ নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান, ২০টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ও গত ১০ বছরের লিটারেচার রিভিউয়ের মাধ্যমে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। আয়োজিত সম্মেলনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি, বড় অংশই তরুণ। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় জনশক্তি যুবরা। প্রতি দশকে এই বয়সীদের সংখ্যা ও অনুপাত বাড়ছে। ২০০১ সালে ছিল ২৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ২৯.৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫ শতাংশ।
যুব জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসেবে দুর্নীতি দমন, জবাবদিহিতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন ৫৬.২ শতাংশ। ৫৫.৪ শতাংশ উল্লেখ করেছেন মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি। ৪০.২ শতাংশ জরিপ অংশগ্রহণকারী তরুণ দেশ ও দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন।
জরিপে দেখা যায়, ৬০.৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন, রাজনীতিতে জড়িত তরুণরা কার্যত সাধারণ তরুণদের প্রায় সবসময় প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ মনে করেন একদমই করেন না।
৩৭.৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, স্ব-স্ব এলাকায়/জাতীয় নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ তরুণদের সঙ্গে নিজ থেকে আলোচনা একদমই করে না। ২১.৭ শতাংশ মনে করেন আলোচনা করলেও তা খুবই কম।
৬৭.৮ শতাংশ মনে করেন সরকারের বাইরে থাকা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) অথবা নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বা তাদের মাধ্যমে উন্নয়ন ও নীতিতে মতামত প্রকাশ করা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করা সমর্থন করেছেন ৫৯.৬ শতাংশ।
৬০.৪ শতাংশ যুব জরিপ অংশগ্রহণকারী বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে। ৪৮.১ শতাংশ শ্রমিকদের জন্য মৌলিক জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে সক্ষম এমন মজুরি দেওয়ার পক্ষে। ৪৮.১ শতাংশ যুব উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা এবং ৪১.৪ শতাংশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাতিল করার দাবি জানান।
জরিপে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে তরুণদের মতামত উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ১৮.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সুযোগ পেলে স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যেতে চান। উচ্চশিক্ষিতের মধ্যে এ ধরনের মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। আরও ১৮.৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অস্থায়ীভাবে চাকরি বা পড়াশোনা করতে বিদেশে যেতে চান। ৩৫.৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, যুবসমাজ আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব/দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ৪৬ শতাংশ মনে করেন, যদি নীতি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে তাহলে তরুণরা প্রস্তুত।
+ There are no comments
Add yours