রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার আবু সাঈদ ফেসবুকে গোল্ডেন রিচ নামে অনলাইন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন দেখেন যাতে বলা হয়, এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ৯০ দিনের মধ্যেই দ্বিগুণ লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। কক্সবাজার আর কুয়াকাটায় রিসোর্টে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে এই লভ্যাংশ দেওয়া হবে। ওই বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অ্যাপের মাধ্যমে তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে বিনিয়োগের লভ্যাংশ তুলতে গিয়ে দেখেন গোল্ডেন রিচের ভেলকিতে সর্বনাশ হয়েছে তার!
অনলাইনে কথিত এই এমএলএম ব্যবসার নামে গোল্ডেন রিচের ভেলকিতে সর্বনাশ হয়েছে কয়েক হাজার ব্যক্তির। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কয়েক কোটি টাকা, পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ এই গ্রুপটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরই মধ্যে গোল্ডেন রিচের কান্ট্রি ম্যানেজার, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর আর এজেন্টসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
অ্যাপের ভেলকিবাজি: গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গোল্ডেন রিচ নামে অনলাইন এমএলএম অ্যাপের মালিক পলাতক মিঠুন। তিনি এই অ্যাপকে ঝুঁকিমুক্ত ও বিশ্বস্ত অনলাইন ইনভেস্টের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রচারণা চালান। মাত্র ৯০ দিনে বিনিয়োগের দ্বিগুণ মুনাফা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তবে টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করেন। চক্রটি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তাদের ফাঁদে কেউ পা দিলে প্রথমে গোল্ডেন রিচ অ্যাপ ইনস্টল করতে হয়।
এরপর নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপরই অ্যাকাউন্টের মালিককে এরা একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। সেখান থেকে বলা হয়, অ্যাপ সাইন ইন করে ১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে একটি ‘রোবট’ কিনলে ৯০ দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা জমা হবে। বিনিয়োগের বিনিময়ে কিছু পয়েন্ট পাওয়া যায়, যাকে প্রতারকরা রোবট বলে। যদিও ওই পয়েন্ট শুধুই সংখ্যামাত্র। একজনের আইডির রেফারেন্স কোড ব্যবহার করে অ্যাপে নতুন আইডি খুললে ২০০ টাকা বোনাস দেওয়ার কথা বলা হয়।
এভাবে চলতে থাকলে লেভেল ১০ পর্যন্ত প্রথমজন বোনাস পেতে থাকবেন। এভাবে অ্যাপসের মাধ্যমে আইডি খুলে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পর তা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তর করে পাচার করা হয়। যদিও এর আগে বলা হয়, কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় কোম্পানিটি রিসোর্টে বড় বিনিয়োগ করেছে। সেখান থেকে দেওয়া হবে লভ্যাংশ।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের এডিসি জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, বিভিন্ন জেলায় যারা বেশি রোবট ক্রেতা অর্থাৎ গোল্ডেন রিচ অ্যাপ ইনস্টল করে আইডি খুলতে পারতো কান্ট্রি ম্যানেজার তরিকুল তাদের থেকে বাছাই করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নিয়োগ দিতেন। এই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডররা আবার এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পরিচালনা করত। এই এজেন্টরা ১০ জন করে একটি গ্রুপ করত। এভাবে সারা দেশেই প্রতারণার জাল ফেলা হয়।
অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার কান্ট্রি ম্যানেজার তরিকুল এক সময় তার তার ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোনের দোকানে চাকরি করতেন। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তাজিরুল ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। আর এজেন্ট রিয়াজুল ইসলাম ফকির এক সময় বাসের হেলপার ছিলেন। পলাতক মিঠুন জিবি কয়েন নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু করেছেন। এই মুদ্রা অনলাইনে ছাড়ার জন্য সম্প্রতি ভারতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও করেন। গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যোগ দেন।
+ There are no comments
Add yours