আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ সময় এখন। এ সময়ে নানামুখী চাপে রয়েছে সরকার। একদিকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন, অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অসন্তোষ। এ ছাড়া, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য নিয়েও চাপে আছে সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের জন্য বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং। তবে, দ্রুত সমাধান জরুরি। এ ছাড়া, শ্রমিক আন্দোলন যেকোনো সময় রাজনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কাজেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে গত ১২ জুলাই। এরপর থেকে টানা তিন মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে রোড মার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনসহ নয়টি স্থানে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সমাবেশ পণ্ড হলে হরতাল ডাকে দলটি। এরপর তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দেয় তারা। বর্তমানে অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে হরতালের পর অবরোধেরও ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামী। হরতাল-অবরোধে প্রতিদিনই পোড়ানো হচ্ছে বাস। রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সংখ্যা কমেছে। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
এদিকে, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন পোশাক শ্রমিকরা। তাদের এ আন্দোলনও সহিংস হয়ে উঠেছে। সোমবার গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। একাধিক কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে, আছে হতাহতের খবরও।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত রাসেল হাওলাদার (২২) ও ইমরান (৩০) নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভ ও কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে সাভার ও আশুলিয়ায়ও। এসব ঘটনায় ৮০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এদিন রাজধানীর মিরপুরেও রাস্তায় নামেন পোশাক শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জেরে ১৫টি বাস, দুটি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও দুটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পোশাক-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করেছে সরকার। তবে, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে, বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মিরপুরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। দুপুর নাগাদ তিনি সেখানে উপস্থিত হলে শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তোপের মুখে পড়ে প্রতিমন্ত্রী দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকরা মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৯টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে ১৪ নম্বরের দিকে চলে যান তারা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু, সরকার নির্ধারণ করার পরও দাম না কমে বরং দিনদিন বাড়ছে। গত চার দিনে আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সরকার আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা করে নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এ ছাড়া, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও লাগামহীন। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কোনো ধরনের উদ্বেগ যাতে তৈরি না হয়, শঙ্কা যাতে তৈরি না হয়, সেই চেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর করা উচিত। নীতিনির্ধারকরা বলতে পারবেন, এখন তারা কী করবেন। সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে মাঠে আন্দোলন করছে। সঙ্গত কারণে সরকারকে জনস্বার্থ দেখতে হবে, যাতে কোনো রকমের শঙ্কা তৈরি না হয়, সহিংসতা তৈরি না হয়।’
+ There are no comments
Add yours