রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার বাসিন্দাদের চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রাকৃতিক পরিবেশের মানোন্নয়নের এ প্রকল্পে ২ টনের ছয়টি এসি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে সেগুলো পার্কে কী কাজে লাগবে সেটি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ ছাড়া প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। চাওয়া হয়েছে গণপূর্তের রেট শিডিউলের চেয়ে বেশি টাকা। বিষয়টিকে অত্যধিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। তাই কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্প প্রস্তাবকারী সংস্থার কাছে এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, পার্ক স্থাপনের জন্য ২০ হাজার গ্যালনের দুটি ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ বাবদ ৫২ লাখ ৪২ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি গ্যালনের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৩১ টাকা। কিন্তু পিডব্লিউডি রেট শিডিউল ২০২২ (সংশোধিত) অনুযায়ী, প্রতি গ্যালন ১১৭ টাকা রেট নির্ধারিত রয়েছে। সেই হিসাবে এ খাতেই ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে।
রেট শিডিউল অনুযায়ী, বিশেষ ধরনের ভবনের জন্য অভ্যন্তরীণ পয়ঃনিষ্কাশন বাবদ প্রতি বর্গমিটারে নির্ধারিত ব্যয় ২ হাজার ৬৯৫ টাকা। তবে প্রকল্পে ৭৮৪.৮৪ বর্গমিটার পয়ঃনিষ্কাশন বাবদ ৬৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটার ব্যয় ৮ হাজার ৯০ টাকা ধরা হয়েছে। এটিকে অত্যধিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ ছাড়া, ব্যায়াম ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী খাতে থোক হিসেবে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এইচটি ক্যাবল, আনুষঙ্গিক কাজসহ থোক ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এগুলো রেট শিডিউল বহির্ভূত আইটেম হওয়ায় তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে বাজারদর যাচাই করে বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন করে তা ডিপিপিতে সংযুক্ত করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে।
প্রকল্পের আওতায় একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অর্থ বিভাগের সার্কুলার অনুযায়ী যানবাহন কেনা বন্ধ থাকায় নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া দুটি সার্ভিস ব্লক নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ সার্ভিস ব্লক কত তলাবিশিষ্ট হবে এবং কীসের ভিত্তিতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন। এমনকি মূলধন খাতের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তাতে প্রাক প্রণয়নকারী কর্মকর্তাদের কোনো সই নেই। এ বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে।
এ ছাড়া গেট নির্মাণ বাবদ ৪ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার, ওয়াকওয়ে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার, শেডসহ ওয়াকওয়ে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার, লেক রিটেইনিং ওয়াল ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৪১ হাজার, পার্কিং এবং এক্সিবিশন এরিয়া ৪ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার, প্লে গ্রাউন্ড ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৫ হাজার, বসার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনসহ যন্ত্রপাতি ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার, জেনারেটর ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯৮ হাজার, এয়ার কুলার, বর্জ্য নিরোধক ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক বাবদ ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার, সিসিটিভি, সাউন্ড সিস্টেম এবং বিভিন্ন ধরনের লাইট বাবদ ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার, ফাউন্টেন ও ওয়াটার সার্কুলেশন সিস্টেম ২ কোটি ৭১ লাখ ২২ হাজার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ৭ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার, সীমানা প্রাচীর ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার এবং একটি ডাবল কেবিন ও দুটি গার্ডেন কার বাবদ ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিকল্পিত সবুজায়নের গুরুত্ব বিবেচনায় বিদ্যমান পার্কগুলোরর উন্নয়ন ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন পার্ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় স্থপতি লুই আই কানের মাস্টার প্ল্যানে নির্দেশিত ২৯.৭৯ একর উন্মুক্ত জায়গায় পরিকল্পিত ল্যান্ডস্কেপিং ও পার্কের সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours