একদফার আন্দোলনে থাকা বিএনপি এখন ৭ জানুয়ারির ভোট ঠেকানোর জন্য নতুন করে আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দিতে চায় দলটি।
উদ্দেশ্য, নেতাকর্মীদের কিছুটা বিশ্রাম দেওয়া, আত্মগোপন অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনা এবং নতুন করে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের জন্য চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।
এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া গণমিছিল, পেশাজীবীদের ব্যানারে সমাবেশের মতো কর্মসূচিও বিবেচনায় রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। পাশাপাশি ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই জাতীয় দিবস ঘিরেও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।
বিরতি দিয়ে দিয়ে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত বিকল্প এসব কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছে দলটির হাইকমান্ড। তবে তা নির্ভর করছে ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালন করতে পারার ওপর। হরতাল-অবরোধ থেকে বের হতে এই কর্মসূচিকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে দলটি।
এজন্য সরকারের আচরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে হরতাল-অবরোধে সাময়িক বিরতি না-ও আসতে পারে। বিএনপিতে দুই ধরনের চিন্তাই রয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর ৭ জানুয়ারির ভোট ঘিরে নতুন কৌশলে আন্দোলনে নামতে চায় দলটি। তখন দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে একত্রে শক্তভাবে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এ ক্ষেত্রে যুগপতের শরিকদের যাতে কোনো আপত্তি না থাকে, সেজন্য শরিকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
জামায়াত গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে পরে এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের অনুমতি ছাড়া গত ২৮ অক্টোবর আরামবাগে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করায় জামায়াতের ভোটে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দলটির নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়া এবং স্বতন্ত্রভাবে ভোটে না যাওয়ায় সে সন্দেহ মিলিয়ে গেছে। সূত্র মতে, একদফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে সম্প্রতি জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন বয়কট করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা যুগপতের বাইরের একাধিক দল ও জোটের সঙ্গেও বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সরকারবিরোধী সব দল ও জোটকে ভোটের আগে এক প্ল্যাটফর্মে আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে ভোট ঠেকাতে আবার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে ফিরতে পারে বিএনপি ও মিত্ররা। আর শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোটের পরও এক মাস পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখা হতে পারে। গত রোববার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকদের সঙ্গে এমন আলোচনা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বিএনপি মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্য নেতারা আত্মগোপনে চলে যান; কিন্তু এক মাস পরও পেশাজীবীদের কর্মসূচি ঘিরে ফের আটক গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুরোপুরিভাবে বিকল্প কর্মসূচিতে যেতে পারছে না দলটি।
জানা গেছে, বিএনপির কর্মসূচি ছাড়াও ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বরাবরের মতো এবারও ঢাকায় ‘মায়ের ডাক’-এর ব্যানারে একটি সমাবেশ হতে পারে। বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে এই কর্মসূচি হতে পারে। এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বরের পরে ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচিও আসতে পারে। যুগপৎ এবং যুগপতের বাইরে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলকে নিয়ে এই গণমিছিল আয়োজনের চিন্তা চলছে।
একই সময়ে নিজ নিজ দল বা জোটের ব্যানারে পালিত হবে এই কর্মসূচি। বিরোধী দলগুলো যে সরকারের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, দেশে-বিদেশে সেই বার্তা দিতে এই গণমিছিলের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া বিকল্প এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে আসতে চান। তবে এই কর্মসূচি এবং দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পালনের ওপর বিকল্প বাকি কর্মসূচি নির্ভর করছে বলে জানা গেছে।
+ There are no comments
Add yours