জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে ভোটবিরোধীদের সহিংস আচরণও বাড়তে পারে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোট ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও জানমালের ক্ষতির মতো অপতৎপরতা বাড়তে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠপর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাশকতাকারীদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া যাবে না। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩ ডিসেম্বর থেকে খুব প্রয়োজন না হলে পুলিশে ছুটি নিতে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে রেলপথে দুটি বড় নাশকতায় প্রাণ গেছে নারী, শিশুসহ পাঁচজনের। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হরতাল ও অবরোধকারীরাই এ ধরনের নাশকতায় যুক্ত।
১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে রেললাইনে কেটে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। এ ছাড়া থেমে থেমে যাত্রীবাহী বাসেও দেওয়া হচ্ছে আগুন। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরাও দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
কয়েকটি জেলা পুলিশের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন সহিংসতা মুক্ত এবং নির্বিঘ্নে যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, সেজন্য নিরাপত্তা ছক ধরে কাজ করছে পুলিশ।
এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের সংঘাত-মারামারির বিষয়টিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে জেলা পুলিশকে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে বিরোধী পক্ষের সহিংসতা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, গতকাল বিএনপি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর তা নিয়ে পুলিশের নানা স্তরে আলোচনা চলছে। মনে করা হচ্ছে, মূলত এ ধরনের আন্দোলনের নামে নাশকতা চালানো হতে পারে। জ্বালাও-পোড়াও ছাড়াও চোরাগোপ্তা হামলা বাড়তে পারে। বাস, রেলসহ নানা গণপরিবহনে নাশকতার পর এবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নাশকতাকারীদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত ১০০ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এপিবিএনের অতিরিক্ত ৬০ সদস্য এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ৫৪ আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে।
থানা পুলিশ ছাড়াও বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও সারা দেশে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসবে নিরাপত্তা বলয় ততই বাড়তে থাকবে।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, নাশকতার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের অনেকেই নানা মামলায় কারাগারে রয়েছে। এরপরও অনেকেই পালিয়ে থেকে নাশকতার নানা ছক কষছে।
সে ছক বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের কর্মীদের। পুরো নির্দেশনা আসছে অনলাইনের নানা সিক্রেট অ্যাপস ব্যবহার করে।
রাজনৈতিক নির্দেশনা পালনের অংশ হিসেবে কর্মীদের অনেকেই নাশকতায় যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ভাড়া করে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে।
+ There are no comments
Add yours