আমাদের দেশে মফস্বল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে এক ধরণের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় হরহামেশাই। বেতন কত, পেনশন আছে কিনা, সরকারি বেতন কিনা-এ ধরণের অনেক অনেক প্রশ্নও করে থাকেন অনেকেই।
পেশাদার সাংবাদিকরা বেতন পান না এমন নয়। তবে তা বেতন আর বয়স জিজ্ঞেস করার মধ্যেও একটা ভদ্রতা রয়েছে, মাধুর্য্য ও সৌন্দর্য রয়েছে। তা মানেন না অনেকেই।
যাই হোক, মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন, তারা কিন্তু শুধু বেতনের জন্য যে সাংবাদিকতা করেন। তা কিন্তু নয়। তারা প্রাথমিকভাবে শখ হিসেবে এ পেশায় জড়িয়ে যান। কিছুটা সম্মান পাওয়ার আশায়। কারণ, সাংবাদিকতা মহান পেশা। বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে সাংবাদিকরা এগিয়ে যান ন্যায় ও সঠিক তথ্য বাহির করার উদ্দেশ্যে ।
যাই হোক, প্রতিটি কাজেরই মূল্য আছে, সময়ের দাম আছে। অথচ মফস্বল সাংবাদিকরা নিজেদের কষ্ট আড়ালে রেখেই অপরের কষ্ট, সমস্যা, অবিচারের শিকার থেকে যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তেমনি রাষ্ট্রের উন্নয়ন তুলে ধরতে দিনভর ক্লান্তিহীন তথ্যের সন্ধানে ছুটে চলা, তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি, তারপর নিজের পয়সায় ইন্টারনেট কিনে রিপোর্টটি প্রেরণ পর্যন্ত তার প্রথম অধ্যায়ের পরিশ্রমের সমাপ্তি ঘটে।
এর দ্বিতীয় দফা কষ্ট শুরু হয় রিপোর্টটি প্রকাশ হলো কীনা। প্রকাশের পর তার প্রতিক্রিয়া কী, ভক্তভোগী বিচার পাইলো কীনা, অসহায়ের ঘরে খাবার গেল কীনা, অর্থের অভাবে চিকিৎসা ব্যহত রোগি চিকিৎসার অর্থ সহযোগিতা পেলো কীনা, হারানো সংবাদটির ব্যক্তির সন্ধান মিললো কীনা এরকম হাজারও সমস্যার তথ্য সংবলিত রিপোর্টটির প্রতিক্রিয়া কি, সুফল কী তার পিছনে লেগে থাকা।
আবার রিপোর্টটি যদি ক্রাইম হয়, রিপোর্টটি প্রকাশের পর ওই রিপোর্টারের উপর কেউ নজর রাখছে কীনা, কেউ আক্রমনাত্মক করার পরিকল্পনা করছে কীনা, কেউ হামলা কিংবা হুমকি দিচ্ছে কীনা এই যে পারিপার্শ্বিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় একজন মফস্বল সংবাদকর্মীকে। এতো সব সমস্যার মুখোমুখি হয়েও একজন মফস্বল সংবাদকর্মী কাজ করে যেন নেশার সাংবাদিকতায় জড়িয়ে।
কই তাদের কথা তো কেউ সহজে ভাবেন না। তার পাশে তো দয়ালু ভাই হয়ে পাশে দাঁড়ান না। কিন্তু নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। বেতন কত? এই বেতন কত? একজন মফস্বল সংবাদকর্মী তার কর্মস্থল হতে যাই বেতন কিংবা সম্মানী ভাতা পান না কেন, তা দিয়ে কিন্তু তার সংসার চলে না। কিন্তু একজন সমাজের দর্পন হিসেবে একজন মফস্বল সংবাদকর্মী যে সমাজের সেবা দেন, রাষ্ট্রের অতন্ত্র প্রহরীর সৈনিকদের মতো দায়িত্ব পালন করেন। তার বেতনের ভারটা কার? তার পরিশ্রমের মূল্যটা কে দিবেন। নাকি আপনার প্রয়োজনে খেটেই যাবেন। কাজ শেষে বলবেন, পরে দেখা করো। দেখবো বিষয়টা।
যাই হোক, মফস্বল সাংবাদিকরা শুধু বেতনের আশায় যে সাংবাদিকতা করেন তা কিন্তু নয়। তারা শখ থেকে এ পেশায় এসে একটা সময় সাংবাদিকতা নেশায় পরিনত হয়ে যায়। যার কারণে সেটা পেশা হয়ে উঠলেও নিজের খেয়ে অপরের কষ্ট তুলে ধরতে তার যে অবিরাম ছুটে চলা, তার এ কাজের কত বেতন হতে পারে? কে বলবেন?
+ There are no comments
Add yours