গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং হতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার এ কথা জানানো হয়।
গতকাল দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, মহেশখালী এলএনজি এফএসআরইউর কারিগরি ত্রুটির কারণে এলএনজি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অতি দ্রুত সমাধানে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে দেশের কিছু কিছু এলাকায় খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে ১৬টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন একেবারেই বন্ধ আছে। এ ছাড়া গ্যাসভিত্তিক অন্য কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গতকাল শনিবার এ খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৫৬২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট।
এদিকে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত নভেম্বরে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে যায়। পরে ১৭ জানুয়ারি রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ফিরে এলেও কারিগরি ত্রুটির জন্য সময়মতো তা চালু করা যায়নি। পাশাপাশি সামিটের এলএনজি টার্মিনালটিতেও সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে গত শুক্রবার দেশের পূর্বাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ ছয় জেলায় গ্যাস সরবরাহে গুরুতর বিপর্যয় ঘটে।
জানা গেছে, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বছরজুড়েই থাকবে গ্যাসের সংকট। রেশনিং করে এ সংকট মোকাবিলার চিন্তা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা এলএনজি থেকে। এ হিসাবে ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। মার্চে দুটি এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে যোগ হবে। তারপরও ঘাটতি থাকবে ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, আপাতত গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উপায় না থাকলেও সংকট সমাধানে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন ও সংস্কারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে সফল হলে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে কয়েকটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তা পরিমাণে কম। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের হাতে থাকা বিবিয়ানায় নতুন গ্যাসের মজুত পাওয়া গেছে। সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এ গ্যাস উত্তোলন চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
+ There are no comments
Add yours