কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়।
এতে করে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট কাটতে শুরু করে। তবে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ধাক্কা লাগে। বিনিয়োগ আটকে যাওয়ায় কেউ চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না।
তেমনি আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগের সুযোগ ছিল না। অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করতে না পারায় লেনদেনে স্থবিরতা দেখা দেয়। যুক্ত হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, এতে বিনিযোগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।
তবে দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখা দিলে বাজারে লেনদেনে চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। একই সঙ্গে প্রায় দেড় বছর পর বিএসইসি পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা গত রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক প্রেক্ষাপটে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ইতিবাচক। তবে এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সেদিকে বিএসইসিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। এতে সব ধরনের বিনিয়োগকারী বাজারে ফিরবেন, যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।
গত রোববার বিএসইসি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখে বাকি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে। সার্বিকভাবে ইতিবাচক হলেও এটা বর্তমান সময়ের জন্য একটি স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এর ফলে মার্কেটে সেল প্রেসার বাড়বে, মার্জিন লোনে বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে প্যানিক সৃষ্টি করে লুণ্ঠনকারীরা যেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হাতিয়ে নিতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পুঁজিবাজার বড় হচ্ছে, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। শেয়ার দরে কখনো উত্থান হবে, আবার পতন হবে। এটিকে মুক্তভাবে ওঠানামা করতে দিতে হবে। কৃত্রিমভাবে কোনো সীমা ঠিক করে দিয়ে শেয়ারের দাম ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএসইসির এমন সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য ইতিবাচক।
২০২২ সালের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের চলমান সংকটে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়েছিল বিএসইসি। গত ১৮ জানুয়ারি বিএসইসির এক নির্দেশনায় ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখে বাকি সব প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলো স্বাভাবিক নিয়মে লেনদেন করছে।
+ There are no comments
Add yours