দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মাস পেরোনোর আগেই গরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। আবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
একদফা দাবিতে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। ভোটের পর এটিই তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। এর বিপরীতে আগের মতোই শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রোববার মাঠে নামছে।
জানা গেছে, নেতাকর্মীদের অনেকে কারাবন্দি কিংবা আত্মগোপনে থাকায় নির্বাচনের আগে কৌশলী অবস্থান নিয়েছিল বিএনপি। শুরুতে ভোট ঠেকানোর কথা বললেও শেষদিকে বর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কর্মসূচি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠিত হলেও অনেকটা ‘ধীরে চলো’ মনোভাবে ছিল বিএনপি। এর মধ্যে অবশ্য আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল নির্ধারণে দলের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি যুগপতের মিত্রদের পরামর্শ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
এর পরই ‘ঝিমিয়ে পড়া’ নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কালো পতাকা নিয়ে রাজপথে নামছে দলটি। নির্বাচন বাতিল, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পুরোনো দাবির পাশাপাশি এ কর্মসূচিতে দ্রব্যমূল্য ইস্যুও সামনে আনা হবে। ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল করতে এরই মধ্যে ডিএমপি থেকে মৌখিক অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
অন্যদিকে নতুন সরকারের যাত্রার শুরুতে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলটিকে ক্ষমতাসীনরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। এবার শুরু থেকেই পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শনিবার ঢাকায় ‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস ও জ্বালানি সংকট নিরসনসহ নানা ইস্যুতে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল ও সংগঠন। আর রোববার কর্মসূচি পালন করবে জামায়াতে ইসলামী।
জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ‘অবৈধ সংসদ’ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সব জেলা সদরে এবং আগামীকাল শনিবার সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি চলবে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল এবং জোটও একই দিনে একই কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সরকারি দল পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার হুমকি দিচ্ছে। তারা ২৮ অক্টোবরের মতো ক্র্যাকডাউন করার কথা বলছে! তবে আমরা কোনো হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ ‘একদফা’ দাবি আদায়ে কালো পতাকা মিছিল করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে এবং মৌখিকভাবে অনুমতির কথা জানানো হয়েছে।’
বিএনপির কর্মসূচির দিন রাজধানীতে বড় জমায়েতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে বলে ক্ষমতাসীনদের অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের দাবি, ভুল রাজনীতি ও অগ্নিসন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে বিএনপি যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছে, সেজন্য তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ রাজধানীতে লোকসমাগম করবে, এ ছাড়া বিএনপি কালো পতাকার মিছিলের নামে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড যেন করতে না পারে, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শনিবার রাজধানীতে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দল। ওইদিন বিকেল তিনটা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ইসলামী দলগুলো নামছে
নির্বাচন ও নির্দলীয় সরকার ইস্যুর পাশাপাশি শিক্ষানীতিসহ চলমান কিছু বিষয় নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে ইসলামী দলগুলো। শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধনের দাবিতে আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আলোচনা সভা করবে দলটি। এ ছাড়া আগামীকাল শনিবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভায় নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান কালবেলাকে জানিয়েছেন।
এদিকে খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির স্বার্থে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল করে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থার দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একাধিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ জানিয়েছেন, দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আগামী রোববার দেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একদলীয় প্রহসনের ডামি নির্বাচন করে সরকার দেশের জনগণ থেকে যেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও একঘরে হওয়ার মুখে পড়েছে। সবক্ষেত্রে দেশে মহাসংকট চলছে। সেজন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান, ডামি নির্বাচন বাতিল এবং নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে রোববার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল হবে।’
+ There are no comments
Add yours